Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদ্যুতের দাম নিয়ে ঘোষণা বৃহস্পতিবার

বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন

বাজারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় না সরকার। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রি করে লোকসান করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে সরকারের ভর্তুকির ওপর চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বৃহস্পতিবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

কমিশনের আদেশে গ্রাহকের জন্য স্বস্তির খবর থাকবে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বিইআরসির দায়িত্বশীল চারজন কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সব জিনিসের দাম চড়া। সরকার এখন দ্রব্যমূল্যে লাগাম টানতে চাচ্ছেন। তাই এমন সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আশঙ্কা কম।

তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে কমিশন এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি বলে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হতে পারে। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। আগামীকাল বুধবার আবার বৈঠকে বসবে কমিশন। এরপর দাম বাড়ানো বা অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতে দাম নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানানো হবে। ভোক্তার স্বস্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

শুনানির পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে আদেশ ঘোষণার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিইআরসি জানিয়েছে, পিডিবির বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাব বা আবেদন-সম্পর্কিত কমিশন আদেশ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।

এর আগে পিডিবি গড়ে ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে গত ১৮ মে শুনানি করে বিইআরসি। এতে ভর্তুকি ছাড়া ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। যদিও ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন শুনানিতে।

দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হয়। এরপর ওই বিদ্যুৎ দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করে পিডিবি। এরপর তা কিনে বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। খুচরা দামও শুনানির মাধ্যমে বিইআরসি নির্ধারণ করে। আজ রাত পর্যন্ত দাম বাড়ানোর কোনো আবেদন বিইআরসিতে করেনি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।

তবে দুটি বিতরণ সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে আজ সন্ধ্যায় বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলে তাঁদেরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া তাঁরা কোম্পানি চালাতে পারবেন না। বর্তমান দামে তাঁরা মুনাফা করলেও সেটি বিনিয়োগে কাজে লাগানো হয়। দাম বাড়ানো হলে তাঁরা লোকসানেও চলে যেতে পারেন। তাই পাইকারি পর্যায়ে দাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা করণীয় ঠিক করবেন।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে গত ১৩ জুলাই বিইআরসিতে একটি চিঠি দিয়েছে ক্যাব। এতে বলা হয়, জ্বালানি খরচ কমিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে কম। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন আর যৌক্তিক নয়।

গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতে দাম। সর্বশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। ওই সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয় দাম। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে গত জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। এরপর চলমান লোডশেডিংয়ের মধ্যেই গত ৬ আগস্ট থেকে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেলে সাড়ে ৪২ শতাংশ এবং পেট্রল-অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫১ শতাংশ। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে এক মাসের মাথায় লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানো হয় জ্বালানি তেলের দাম।