সন্ত্রাসবিরোধী আইনের পৃথক দুই মামলায় মেজর সাদিকুল হক ও তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রাজধানীর ভাটারা থানার মামলায় সাদিকুলকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ তাঁর সাত দিনের রিমান্ডের চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি নিয়ে আজ সোমবার এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান।
অন্যদিকে গুলশান থানার মামলায় সুমাইয়ার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি নিয়ে আজ তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান শাহাদাত।
সাদিকুল রিমান্ডে
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, সাদিকুলকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। ভাটারা থানার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান জোনের পরিদর্শক জেহাদ হোসেন এই আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী আল-আমিন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাদিকুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা-সংলগ্নকে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীসহ ৩০০ থেকে ৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
এ ঘটনায় গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। গত ১ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা সেনা কর্মকর্তাকে ১৭ জুলাই সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সুমাইয়া রিমান্ডে
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আজ সাড়ে ৯টায় সুমাইয়াকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। বেলা ১১টার দিকে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। গুলশান থানার মামলায় তাঁর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন ডিএমপির ডিবির গুলশান জোনের পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক মামুন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী মুহা. নোমান হোসাইন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-১–এর জব্বার টাওয়ারের পাশের সড়কে গত ২২ এপ্রিল সকালে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জন মিছিল করেন। সে সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশবিরোধী স্লোগান দেন। তখন পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকিরা পালিয়ে যান। সেদিনই পুলিশ বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ‘গোপন বৈঠকের’ সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ৬ আগস্ট সুমাইয়াকে হেফাজতে নেয় ডিবি। পরের দিন তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর হয়। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আজকের আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা যায়, সুমাইয়া সেদিনের মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। আসামি দেশের সার্বভৌমত্ব, মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের অর্থ জোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সক্রিয়। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। আসামি সারা দেশের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। সে জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।