সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে হাইকোর্টের চার বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতির মধ্যে ৪ বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ ও অপসারণ দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। তবে তাঁদের নাম তখন প্রকাশ করা হয়নি। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে চূড়ান্ত শুনানির পর বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান গত ৩১ আগস্ট প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর সই করা পদত্যাগপত্র দেন। রাষ্ট্রপতি ৭ সেপ্টেম্বর পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেছেন। এর আগে গত ২৬ আগস্ট বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয়।

এর আগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন গত ৩০ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন অবস্থায় দুজন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা ১২ বিচারপতির মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারপতি খিজির হায়াতকে চলতি বছরের ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে চলতি বছরের ২১ মে অপসারণ করা হয়।

কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিল গঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপর দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস) ইতিমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন। বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তাঁদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন) হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তাঁরা নিয়োগ পান। গত বছরের ৩০ জুলাই তাঁদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ৬ মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ জানুয়ারি তাঁদের বর্ধিত ওই মেয়াদ শেষ হয়।

সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন অপর চার বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২০ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ।  সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন গত ২১ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ–সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়।