উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদন

আগামী বছর দেশে বেকারের সংখ্যা হতে পারে ৩৩ লাখ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ছেলেটির বের হওয়ার কথা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে৷ ছাত্র হিসেবে গড়পড়তা, পড়ছেন ইতিহাস৷
মাথার মধ্যে এখনই চিন্তা ঘুরছে পড়ালেখা শেষ করে কোথায় কাজ করবেন৷ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে সরকাির কলেজে চাকরিই পছন্দ৷ তবে দেশে বেকারত্ব পরিস্থিতি আগামী বছর মানে ২০১৫ সালে আরও খারাপ হতে পারে, এমন একটি খবর শুনে এখন আর ছেলেটি কোনো কিছু ঠিকঠাকমতো ভাবতে পারছেন না৷
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের হালনাগাদ প্রতিবেদন পূর্বাভাস দিয়েছে যে যদি দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধিতে গত এক দশকের গড়হার বজায় থাকে, তাহলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩৩ লাখে দাঁড়াতে পারে৷ ছেলেটির ভাবনা, তিনিও এই ৩৩ লাখের একজন হয়ে যাবেন না তো?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ২০১০ সালে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ৷ আর ২০০০ সালে ছিল ১৭ লাখ৷ এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক বেকারত্ব বৃদ্ধির গড়হার ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ৷ সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর বেকার মানুষের সংখ্যা ৩৩ লাখ হতে পারে৷
প্রকৃত পরিস্থিতি অবশ্য জানা যাবে আরও বছর খানেক পরে যখন বিবিএস শ্রমশক্তির ২০১৫ সালের পূর্ণাঙ্গ তথ্য–উপাত্ত প্রকাশ করবে৷
এখানে অবশ্য বলা দরকার যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুসারে, বিগত চার সপ্তাহ ধরে কাজ খুঁজেছে তবে কাজ পায়নি কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন কর্মক্ষম মানুষকে বেকার বলা হয়৷ বাংলাদেশের পরিপ্রেিক্ষতে আইএলওর এই সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়ে গেছে৷
তবে বিবিএস কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব পরিস্থিতি নির্ধারণে এখন পর্যন্ত আইএলওর এই মানদণ্ড অনুসরণ করে আসছে৷ আর এই মানদণ্ড অনুসারে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক নিম্ন পর্যায়ে৷ ২০১০ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ৷ আর ২০০৫ সালে ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ৷
বেকারত্বের সংজ্ঞার এই বিতর্ক আপাতত এক পাশে সরিয়ে রেখে বরং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়েছে উন্নয়ন অন্বেষণ৷ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আংশিক বেকারত্ব, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান, যুব বেকারত্ব ও মোট শ্রমশক্তিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে যে ২০০০-২০০৫ সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ যা ২০০৫-২০১০ সময়ে হয় ৮ দশমিক ৫ শতাংশে৷ এই হারে দারিদ্র্য পরবর্তী বছরগুলোয় কমতে থাকলে তা বেকারত্ব পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে৷
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, পূর্ণকালীন কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠায় আংশিক কর্মসংস্থানে (বাংলাদেশে সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার কম) অংশগ্রহণ বাড়ছে৷ দেশে ২০১০ সালে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ আংশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করেছেন, যা দেশের মোট কর্মজীবী শ্রমশক্তির ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ। তখন মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ৷ আবার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ও নারী শ্রমিকদের মধ্যে আংশিক কর্মসংস্থানের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
২০১০ সালের জরিপের তথ্য উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে আংশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারীর সংখ্যা মোট শ্রমশক্তির ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ; শহরাঞ্চলে এর পরিমাণ ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অপরদিকে, গ্রামাঞ্চলে আংশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী নারীর সংখ্যা মোট নারী শ্রমশক্তির ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ, মোট আংশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী ৪৭ শতাংশই নারী শ্রমিক।
এ অবস্থায় অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷ এজন্য শ্রম-নিবিড় উৎপাদন-সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতি-কাঠামো পুনর্বিন্যাসের আহ্বান জানিয়েছে৷