Thank you for trying Sticky AMP!!

আমূল সংস্কার ছাড়া এত রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়

আহসান এইচ মনসুর

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, সেটা অবাস্তব। বছর শেষে বিরাট ঘাটতি হবে, তা অনুমেয় ছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এত রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা নেই। এর কারণ, রাজস্ব খাতের সংস্কারে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এনবিআরের জনবলসংকট আছে। শুল্ক-কর প্রদান ব্যবস্থায় যথেষ্ট অটোমেশনও হয়নি। এ জন্য বছরের শুরুতেই বলেছিলাম, ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আরও ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্ব আদায় হবে। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার যে মূল লক্ষ্য ছিল, তা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি হতে পারে। ২ লাখ ৫ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে। এ বছর যদি গতবারের সমান রাজস্ব আদায় হয়, তাহলে এনবিআরকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করতে হবে। খুব ভালো রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

 চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বিবেচনা করলে আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, যা কোনো দিন এনবিআর পারেনি। এমনকি পৃথিবীর কোনো দেশ পারেনি। নিম্নভিত্তির রাজস্ব আদায়ের দেশও কখনো পারেনি। এ ছাড়া করোনার প্রভাব অন্তত আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত থাকবে। এর আগে ব্যবসা–বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা যায় না। এ ছাড়া করোনার প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটে শুল্ক-করে বেশ ছাড় দিতে হবে। নতুন কর আরোপও করা যাবে না।

এমন অবস্থায় রাজস্ব খাতে আমূল সংস্কার ছাড়া এত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব নয়। এই সংস্কার এক দিনে করা সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছর থেকেই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার শুরু করা উচিত। প্রথমেই অটোমেশনে নজর দেওয়া উচিত। এতে দুর্নীতি-অনিয়ম কমবে। কর কার্যালয়গুলো মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া কর ফাঁকি প্রতিরোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্রুত বিদ্যমান আইনগুলো যুগোপযোগী করতে হবে। 

 রাজস্ব খাতে সংস্কার না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে যে অর্থ দরকার, এর জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। এসডিজি অর্জনে অতিরিক্ত বহু লক্ষ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর ৯০ শতাংশই দিতে হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মানে, এনবিআরকেই সিংহভাগের জোগান দিতে হবে। বিদ্যমান রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে তা সম্ভব হবে না। তাই রাজস্ব খাতে বড় সংস্কারের বিকল্প নেই। আমরা যে ধরনের উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি; ওই সব উন্নত দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০-৩০ শতাংশের সমান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় হয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম কর-জিডিপির অনুপাতের দেশ। 

 আগামী অর্থবছরে সোয়া ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। এটি বেশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তৈরি পোশাক মালিকেরা বলছেন, ক্রয়াদেশ অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। রাজস্ব আদায়েও বেশ শঙ্কা আছে। প্রবাসী আয় কমতে পারে। অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদাও কমবে। তাহলে এত প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে? ভুল লক্ষ্য থাকলে সব খাতেই ভুল হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতেই গলদ আছে। ফলে পুরো বাজেট কাল্পনিক বাজেটে পরিণত হচ্ছে।