Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন উদ্যোগ, নতুন কমিটি

  • বাংলাদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

  • বাংলাদেশি কোম্পানিকে নীতিমালার আওতায় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে এটা দ্বিতীয় উদ্যোগ।

  • বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭–এর অধীনে সরকারের পরামর্শক্রমে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়।

বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, তাঁরা তিন মাসের মধ্যে খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে চান।

বাংলাদেশি কোম্পানিকে নীতিমালার আওতায় বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে এটা দ্বিতীয় উদ্যোগ। ২০১৮ সালে এমনই একটি নীতিমালার খসড়া করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বিষয়টি তখন আর এগোয়নি। এবারের কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডলকে।

এ বিষয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘বাংলাদেশি কোম্পানি যদি বিদেশে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিয়ে আসতে পারে, তাহলে আমি কোনো অসুবিধা দেখি না। এ বিষয়ে কমিটি কাজ করছে। তাদের সুপারিশের পর সরকার সুবিধা-অসুবিধা দেখে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

বর্তমানে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭–এর অধীনে সরকারের পরামর্শক্রমে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত কোনো নীতিমালা নেই।

বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে এর আগেও একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন’ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিডার তখনকার নির্বাহী সদস্য অজিত কুমার পালকে সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ‘বিদেশে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ নীতিমালা’র বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করতে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল।

অজিত কুমার পালের নেতৃত্বে কমিটি শুধু যোগ্যদের এ সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা করার কাজ শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে শুধু এ দেশের রপ্তানিকারকেরা। বিদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে আগ্রহী কোম্পানির রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব থাকতে হবে এবং তাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে।

এ খসড়াটি বিডার গভর্নিং বোর্ডের সভায় অনুমোদনের জন্য ওঠার কথা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতি। বিডার গভর্নিং বোর্ডের সভাটি গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তার আগেই নতুন করে নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি করে দেয় সরকার। কমিটি ইতিমধ্যে একটি বৈঠক করেছে গত জুলাই মাসে।

এ বিষয়ে গতকাল বিডার এক সংবাদ সম্মেলনে নাভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার নীতিমালা করার মতো সময় এসেছে কি না, তা মূল্যায়ন করতে আগের কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি নীতিমালা করার সুপারিশ করেছিল। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এখনো পাইনি। তবে আমরা কাজ শুরু করেছি। তিন মাসের মধ্যে নীতিমালার একটি কাঠামো করতে চাই।’

যারা বিনিয়োগ করেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩ সাল থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো, এমজেএল বাংলাদেশ, ইনসেপটা ফার্মা, ডিবিএল গ্রুপ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম, বিএসআরএম, সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিডেট, আকিজ জুট মিলস ও এসিআই হেলথ কেয়ারের মতো প্রতিষ্ঠান।

বিনিয়োগকারীরা মূলত রপ্তানি বাজার তৈরি এবং কাঁচামাল আমদানির সুবিধার জন্য সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলেছে। আবার কেউ বিদেশি কোম্পানির শেয়ার কিনে মালিকানার অংশীদার হয়েছে। কেউ কেউ সরাসরি কারখানা করেছে। যেমন স্কয়ার ও ডিবিএল। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে নানা ব্যবসা রয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর আসছে।

স্কয়ার কেনিয়ার নাইরোবিতে ওষুধ উৎপাদন কারখানায় বিনিয়োগ করেছে। ২০১৭ সালে তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক ঘোষণায় জানায়, এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে ২ কোটি মার্কিন ডলার, যা এখনকার মূল্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিবিএল বিনিয়োগ করেছিল ইথিওপিয়ায়। সেখানে তারা একটি পোশাক কারখানা করেছিল।

একটি নতুন দেশে বিনিয়োগ করতে গিয়ে শুরুতে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এখন তা ধীরে ধীরে কাটছে। ব্যবসা আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।
এম এ রহিম, বিজিএমইএর সহসভাপতি

বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ও ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম প্রথম আলোকে বলেন, একটি নতুন দেশে বিনিয়োগ করতে গিয়ে শুরুতে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এখন তা ধীরে ধীরে কাটছে। ব্যবসা আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত ষাটের দশক থেকেই তাদের কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে আসছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে নীতিমালার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু সরকার নানা কারণে এ বিষয়ে ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছিল।’