Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রবাসী আয়ে নতুন দ্বার এজেন্ট ব্যাংকিং

প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) সবচেয়ে বেশি আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এরপরই বেশি আয় আসত রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী, সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রেমিট্যান্স সংগ্রহের চিত্রটি এমনই। তবে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

এখন ইসলামী ব্যাংকের পরই বেশি রেমিট্যান্স আসে বেসরকারি খাতের ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। এর কারণ, এজেন্টদের হাত ধরে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক পৌঁছে গেছে নতুন নতুন গ্রাম, হাট ও এলাকায়। এসব এলাকায় ব্যাংকটি তিন হাজার এজেন্ট নিয়োগ করেছে। এতেই রেমিট্যান্স বিতরণের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে ব্যাংকটি। বেশি প্রবাসী আয় আসায় ব্যাংকটিতে ডলারের সংকটও নেই। তবে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে কোনো কোনো মাসে অগ্রণী ব্যাংকও ইসলামী ব্যাংকের পরে চলে আসছে, তা–ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণে।

শুধু ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক নয়, এজেন্টদের কারণে ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমেও এখন দেশে বেশি পরিমাণ প্রবাসী আয় আসছে। ২০১৩ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে দেশে ৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করা ১৯টি ব্যাংক সারা দেশে ৮ হাজার ৬৭১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করেছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে প্রবাসী আয়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চেওয়াখালী বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা করছেন মমতাজ নাহার। যোগাযোগ করা হলে সম্প্রতি তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার লোকের আগে অনেক দূরে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো প্রবাসী আয় আনতে হতো। এখন বাড়ির কাছে থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। আগে দিনে ১৫-২০ জনের আয় আসত,এখন ৮ থেকে ১০ জনের আয় আসে। কারণ, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং একেবারে গ্রামে চলে গেছে। এ কারণে যাঁরা প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন, নিজ বাসার পাশে এজেন্ট আছে—এমন ব্যাংককে তাঁরা বেছে নিচ্ছেন। এতে করে প্রবাসী আয়ের সুবিধাভোগীদের শহরের ব্যাংক শাখায় যেতে হচ্ছে না।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এজেন্টদের কারণে ব্যাংকগুলো ভালো আমানত পাচ্ছে। অনেকে প্রবাসী আয়ের টাকা আমানত হিসেবেও জমা রাখছেন। যাতে করে এজেন্ট সেবায় জোর দেওয়া ব্যাংকগুলোর ডলার ও নগদ টাকার সংকট কেটে গেছে। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা হয়েছে এ সেবায়।

খুলনার কয়রা উপজেলার বাসিন্দা শাহিনা আখতারের স্বামী মালয়েশিয়া থাকেন। প্রতি মাসেই তাঁকে টাকা পাঠান। আগে জেলা শহরে গিয়ে টাকা তুলতেন। এখন উপজেলাতেই তুলতে পারছেন। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আগে জেলায় গেলে পুরো দিনই শেষ হয়ে যেত। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই। এজেন্টদের কাছে টাকা চলে আসছে, বাড়ির কাছে থেকেই সেই টাকা তুলতে পারছি।’

 বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় ২০১৩ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে, ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এসেছে ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা।

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার বা ৯২৯ কোটি টাকার প্রবাসী আয় আসে। আর চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই (জানুয়ারি-জুলাই) এসেছে ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের আয়। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় প্রায় ১৫ লাখ নতুন গ্রাহকও তৈরি করেছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি আয় আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে—৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এরপরই ডাচ্‌–বাংলার মাধ্যমে আসে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৯ কোটি ডলার। আর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আসে প্রায় ৩০ কোটি ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ২২ কোটি ১২ লাখ ডলার। অথচ গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়েও বেশি প্রবাসী আয় সংগ্রহের তালিকায় ইসলামী ব্যাংকের পড়ে ছিল অগ্রণী, সোনালী ও জনতা। এরপর ছিল ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের অবস্থান।

জানতে চাইলে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্টদের কারণে যাঁরা আয় পাঠাচ্ছেন, তাঁদের আত্মীয়রা একেবারেই বাড়ি কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন। এ কারণে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা অনেক বেড়ে গেছে। ডলার নিয়ে অনেক ব্যাংক চিন্তায় থাকলেও ডাচ্‌–বাংলায় ডলারের কোনো সংকট নেই।

একই সুবিধা পাচ্ছে ব্যাংক এশিয়ার গ্রাহকেরাও। ব্যাংকটির তিন হাজার এজেন্ট আউটলেট ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা আমানতও সংগ্রহ হয়েছে এসব এজেন্টের মাধ্যমে। গত জুলাই মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৪৩২ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসেছে ১১৯ কোটি টাকা। ওই মাসে ৩২ হাজার ৩৪৯ জন প্রবাসী আয় পাঠাতে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করেছেন।

জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলি প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্টদের বেশির ভাগই গ্রামে বা বাজারে। এ কারণে গ্রাহকেরা সহজেই সেবা নিতে আসছেন। আর ছোট স্থাপনায় হওয়ায় যেকোনো আয়ের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিচ্ছে। প্রবাসীরাও টাকা পাঠাতে বাসার পাশের এজেন্টকে বিবেচনায় নিচ্ছেন।

 গত জুলাই থেকে প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর ফলে গত জুলাই মাসে ১৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুলাই মাসে ১৩২ কোটি ডলারের আয় এসেছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি আয় পাঠান প্রবাসীরা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে।