Thank you for trying Sticky AMP!!

বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততার স্বার্থে সবার জন্য ইন্টারনেট চাই

ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ

বিবেক সুদ

প্রথম আলো: গ্রামীণফোন ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছে। বর্তমানে কোন ধরনের সেবার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকে জোর দিচ্ছে?
বিবেক সুদ: গ্রামীণফোন দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর। মোবাইল ফোন সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের প্রায় সর্বত্র মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করার সুযোগ তৈরি দিতে আমরা সক্ষম হয়েছি। মোবাইল ফোনের কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়। দেশের ভেতরে-বাইরে সর্বত্রই তারা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকছে। এই যুক্ততা যেমন সামাজিকভাবে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় বড় ধরনের স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন সেবা। ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা এখন মোবাইল ফোনের এসব সেবা নিচ্ছেন। বাড়ছে নানা ধরনের সেবার চাহিদা। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস একটি বড় অর্জন। এই বাস্তবতায় আমরা এখন ইন্টারনেট ফর অল বা সবার জন্য ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম শুরু করেছি। বলা যায়, এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ।
প্রথম আলো: সবার জন্য ইন্টারনেট মানে কি দেশের প্রতিটি মানুষের হাতে গ্রামীণফোন ইন্টারনেট সেবার সুযোগ পৌঁছে দিতে চায়? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলুন।
বিবেক সুদ: আসলে আমরা যেটা বলতে চাইছি, সেটা হলো মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ক্ষুদে বার্তা বিনিময় করার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগটা সহজ হয়েছে। এটা তো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু মোবাইল ফোন প্রযুক্তি এখানেই থেমে থাকেনি। আজকের দুনিয়ায় ইন্টারনেট মানুষকে একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে। সারা বিশ্বকেই নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ফেলেছে। ইন্টারনেটের বহুবিধ সুবিধা আর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়াও এখন আর কোনো সুদূরপরাহত কাজ নয়। বরং এটাই এখন সময়ের চাহিদা। পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে ও বাণিজ্যিকভাবে সম্পৃক্ততার স্বার্থেই সবার জন্য ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। তাই বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের হাতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ারও কোনো বিকল্প নেই।
প্রথম আলো: গ্রামীণফোন নিজে কি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে? চাহিদার দিক থেকে যদি বুঝতে চাই, তাহলে বাংলাদেশের সব মানুষই বা কতটুকু প্রস্তুত এই সেবা গ্রহণ করার জন্য?
বিবেক সুদ: গ্রামীণফোন যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই কাজে নেমেছে। ইতিমধ্যে আমরা থ্রিজি প্রযুক্তি চালু করেছি। সবার জন্য ইন্টারনেটের যা অন্যতম পূর্বশর্ত। অন্যান্য কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতিও আমাদের আছে। অন্যদিকে যথেষ্ট চাহিদাও আছে। এখানে বড় বাধা হলো, যথাযথ মোবাইল ফোনসেটের অপ্রতুলতা। এখন পর্যন্ত দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকেরা যে মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করেন, তার ৬০ শতাংশ হলো বেসিক সেট। তার মানে এসব সেটে থ্রিজি সক্রিয় হবে না, ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার এখন ইন্টারনেটের উপযোগী ফোনসেট বা স্মার্ট সেট সহজলভ্য করতে হলে করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজস্ব প্রণোদনা। সরকার তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো কনটেন্ট বা উপাদান তৈরি করা। মানুষ ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে কী কী পেতে পারে বা কেন এই সেবা ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা বুঝতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি নানা বিষয়ে নানা ধরনের সেবা ও অ্যাপলিকেশন নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ জন্যও গ্রামীণফোন কাজ করছে। প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন অ্যাপস তৈরির কাজ করছি।
প্রথম আলো: গ্রামীণফোন বাংলাদেশের কতখানি এলাকাজুড়ে থ্রিজি সুবিধা নিয়ে যেতে পেরেছে? পুরো বাংলাদেশ থ্রিজির আওতায় আনতে আপনাদের কত দিন লাগবে?
বিবেক সুদ: এখন গ্রামীণফোনের তিন লাখ গ্রাহক থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করছেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে থ্রিজি নেওয়ার্ক পৌঁছে গেছে। এ বছর এপ্রিল মাসের মধ্যে আমরা মোট জনগোষ্ঠীর ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশকে থ্রিজির আওতায় নিয়ে আসতে পারব বলে আশাবাদী। আগেই বলেছি, থ্রিজি প্রযুক্তির সুবিধা নিতে হলে উপযোগী মোবাইল ফোনসেট প্রয়োজন।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) মোবাইল ফোনের সেবা সম্প্রসারণে কতটা কার্যকর ও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারছে?
বিবেক সুদ: যদি ২০১২ সালের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে বলতে হবে যে ২০১৩ সালে বিটিআরসি যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের অগ্রগতি হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে। যেমন, স্পেকট্রাম তরঙ্গ বরাদ্দ। বিটিআরসির নিজস্ব ক্ষমতাবলে তরঙ্গ বরাদ্দ ও মাশুল নির্ধারণের পরিবর্তে এটি বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। একইভাবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট-২০১০ প্রণীত হলেও এর আওতায় বিধিমালা এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। ফলে আইন কীভাবে প্রয়োগ ও কার্যকর হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]