নেপাল ও ভুটানে সরাসরি পণ্য পরিবহনে ভারতের কাছে বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা চাইবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তাঁর আশা, ভারতের কাছ থেকে এ সুবিধা বাংলাদেশ পাবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরনের সঙ্গে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বৈঠক শেষে এ কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের আপত্তিতে তা হয়নি। তবে যেসব দেশ এই চুক্তিতে আগ্রহী ছিল, এখন তাদের সঙ্গে ট্রানশিপমেন্ট হতে পারে এবং তা দ্বিপক্ষীয়ভাবে হবে। তিনি জানান, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। এ দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে এখন ভারতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যেহেতু ভারতের ট্রানজিট চুক্তি আছে, তাই তাদের পরিবহন বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত আসে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তি না থাকায় এ দেশের পণ্য নিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যবাহী যান নেপাল ও ভুটানের সীমান্ত পর্যন্ত যেতে পারে না।
প্রসঙ্গত, অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে প্রস্তাবিত ‘মোটর ভেহিকেলস অ্যাগ্রিমেন্ট’ হওয়ার কথা ছিল। এ চুক্তির আওতায় সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে কার্গো ভেহিকেলে পণ্য ও মালামাল পরিবহন এবং বাস সার্ভিসে যাত্রী পরিবহন করার প্রস্তাব ছিল। এ ছাড়া ‘সার্ক রিজিওনাল রেলওয়েজ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর সার্ক মেম্বারস স্টেটস’ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে রেল নেটওয়ার্ক স্থািপত হবে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরোধিতায় তখন এ চুক্তি হয়নি।
ভারতের সঙ্গে ট্রানশিপমেন্টের প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের পণ্য আশুগঞ্জ হয়ে ত্রিপুরায় যায়। তাদের সে পণ্য কলকাতার বন্দর থেকে বাংলাদেশের জাহাজে করে আসছে। এ দেশের ট্রাকে করে তা আশুগঞ্জ হয়ে ত্রিপুরায় যায়। ট্রানশিপমেন্টের আওতায় ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার টন চাল নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ হাজার টন চাল নেওয়া হয়েছে। বাকি চাল নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।
বৈঠক শেষে পঙ্কজ সরন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক বন্ধু। ভারতের অনেক বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ বিনিয়োগ হলে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়বে। ফলে দুই দেশই লাভবান হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পঙ্কজ সরন বলেন, ভারত চায় এ অঞ্চলের সব জনগণের উন্নতি হোক। দেশটিতে বর্তমানে যে নতুন সরকার রয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো ভারতে উন্নতির পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করা।
বৈঠকে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ নেপাল থেকে ২ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ভুটান থেকে ২ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে রপ্তানি করেছে মাত্র ১৯ লাখ ডলারের পণ্য। ফলে এই দুই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতি রয়েছে।