Thank you for trying Sticky AMP!!

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই

ব্যাংক খোলার প্রথম দিন মতিঝিলের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের নিচে দেখা গেল গ্রাহকদের লম্বা লাইন। যেখানে কোনো সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। ঢাকা, ৩১ মে। ছবি: সানাউল্লাহ সাকিব

বেলা আড়াইটা। মতিঝিলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানুষ গিজগিজ করছে। নতুন ব্যাংক, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে এত গ্রাহকের ভিড় হবে? আলাপ করে জানা গেল, গাড়ির লাইসেন্স নবায়নের টাকা জমা দেওয়ার জন্য সবাই ঝুঁকি নিয়ে এসেছেন।

লাইনে ৭০ বছরের বৃদ্ধ যেমন ছিলেন, তেমনি ২৫ বছরের যুবকও রয়েছেন। কিন্তু সবাই এমন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়েছেন, যেন মতিঝিলে করোনাভাইরাস নেই। ৬৬ দিন পর পুরোদমে ব্যাংক খোলার প্রথম দিনে এমনই ছিল মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ার চিত্র। কিছু অন্য ব্যাংকে ভিড় না থাকলেও চিত্র খুব বেশি ব্যতিক্রম ছিল না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো উদ্যোগ কোথাও দেখা যায়নি। শুধু ব্যাংকগুলোর লিফটেই বেশি মানুষ ওঠা নিয়ে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। ব্যাংকের ভেতরে আমরা সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করছি। কিন্তু বাইরে কোনোভাবে পারছি না। সরকার জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে, কিন্তু অনেকেই তা বুঝতে চাইছেন না।’

সকালের দিকে গুলশান ও বনানী এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকগুলোতে অবশ্য ব্যাংকার ও গ্রাহকদের অতিসতর্ক মনে হয়েছে।
প্রথম দিনেই সব সরকারি ও বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক সব কর্মকর্তাকে অফিস করিয়েছে। তবে পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে, ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে। এখন চায়ের দোকান ও ব্যাংকে বসে আড্ডা ও ঈদ-পরবর্তী কুশলাদি বিনিময় চলছে। অধিকাংশ ব্যাংকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে কর্মকর্তাদের আসন বিন্যাসে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। একই অবস্থা খোদ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকেও। ফলে সামাজিক দূরত্ব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। তবে অল্প কিছু বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক তা মেনেছে।
সকাল নয়টায় মিরপুর ১৪ নম্বরে দেখা যায়, সবাই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে সড়কে কোনো গণপরিবহন নেই। কোনো সিএনজি বা প্রাইভেট কার এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এই প্রতিবেদকের মোটরসাইকেলে ওঠার জন্যও কয়েকজন টেনে ধরেন। অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাকেও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকায় প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে কর্মীদের যাতায়াতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কোনো ব্যাংকই সব কর্মকর্তার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাফিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা কাগজেই রয়ে গেছে। অফিস খুলেছে, কিন্তু গাড়ি খোলেনি। কী বিচিত্র দেশ!’
সকালেই বনানীতে ঢাকা, প্রিমিয়ার, ফার্স্ট সিকিউরিটি এবং গুলশানে রূপালী, ব্র্যাক, এক্সিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা যায়, তেমন গ্রাহক নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই মাস্ক পরেছেন। আর শাখায় প্রবেশের সময় গ্রাহকদের হাত ও পায়ে জীবাণুনাশক দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। তবে জানান, এসব শাখার গ্রাহকদের বেশির ভাগই ধনী। করোনাভাইরাসে তাঁরা সচেতনও বেশি। এ জন্য শাখায় ভিড় কম।

তবে মতিঝিলের চিত্র পুরো উল্টো। সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক শাখা। বেলা তিনটায় গিয়ে দেখা যায়, শাখায় প্রবেশে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে চার-পাঁচজন গ্রাহক অপেক্ষা করছেন। এরপরও কোনো দূরত্ব মানছেন না।
জানতে চাইলে শাখাটির ব্যবস্থাপক মো. মোদাচ্ছের হাসান বলেন, ‘যেকোনো সময়ের তুলনায় কম গ্রাহক এসেছেন। এরপরও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা যাচ্ছে না। ব্যাংকে এলে সবাই সেবা নেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। কেউ অপেক্ষা করতে চান না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় তেমন ভিড় ছিল না। কাউন্টারের সামনে দু-তিনজন গ্রাহক অপেক্ষা করছেন। শাখার কর্মকর্তারা কোনো দূরত্ব না মেনে আগের মতোই পাশাপাশি বসেছেন।

একই অবস্থা দেখা যায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা ও জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখাতেও। এসব ব্যাংকেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বেসরকারি খাতে ইসলামী ব্যাংকের জনবল সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১৪ হাজার। তাই ব্যাংকটির শাখাগুলোর আসন বিন্যাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও কঠিন। ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দূরত্ব বজায় রেখে কাজ চালাতে প্রধান কার্যালয়ে পালাক্রমে কাজ শুরু হয়েছে। শাখাগুলোতে আগের মতো সবাই কাজ করছেন। সবার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এভাবেই নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর সীমিত আকারে ব্যাংক সেবা চালু ছিল। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনার মধ্যে কর্মকর্তাদের অফিসে যেতে উৎসাহ বাড়াতে চালু করা হয় বিশেষ ভাতা ও বিমাসুবিধা। এখন সেই সুবিধাও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও ঢিলেঢালা


এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। আপাতত নিজস্ব কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও প্রভাব খাটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার ঘটনা ঘটেছে। কর্মকর্তাদের আসন বিন্যাসে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বা কাউকে ছুটিতে পাঠানো হয়নি। ফলে কাজ করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে পারছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তবে সব কর্মকর্তাকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা এখনো কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম পাননি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া শুরু হয়েছে, শিগগির সবাই পেয়ে যাবেন। যেসব বিভাগে আসনব্যবস্থার কারণে দূরত্ব বজায় রাখতে পারছে না, তাদের মৌখিকভাবে ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উদ্যোগ সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা তো কোনো ব্যাংককে এ জন্য বাধ্য করতে পারি না। নিজেদের কর্মীদের নিরাপদ রাখা তাদের দায়িত্ব, সেটা কীভাবে করবে, এটা তাদের ব্যাপার।’