Thank you for trying Sticky AMP!!

মালিকের কৌশলে শ্রমিকের ক্ষোভ

পোশাকশ্রমিকেরা আজ মঙ্গলবারও সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। ছবি: তানভীর আহমেদ
>
  • পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা
  • মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা
  • একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে
  • সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ
  • ৩,৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন

নতুন মজুরিকাঠামোতে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা। একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে। সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ। কারণ, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে জন্য ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পুরোনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরিকাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কারখানায় এই তিন গ্রেডেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

মূল মজুরি কম হারে বাড়ানোর পুরোনো কৌশলটি মালিকপক্ষ এবারও নিয়েছে। তার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। ফলে  ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না তাঁদের। পাঁচ বছর পর নতুন মজুরিকাঠামোতে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, এমনটিই জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিকনেতা।

আট হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। চলতি মাস থেকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরিকাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকেরা। নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আজমপুর, আবদুল্লাহপুর এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ করেন। সাভারের হেমায়েতপুরেও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

মজুরি নিয়ে শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের সব মজুরিকাঠামোতেই বেসিক (মূল মজুরি) কম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল মালিকপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভাতা বৃদ্ধি করে মূল মজুরি কমানো হয়েছে। মালিকদের এই কৌশলই শ্রম অসন্তোষের অন্যতম কারণ। গতবারের মজুরিকাঠামো বাস্তবায়নের পর থেকে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেসিক বেড়েছে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, নিম্নতম মজুরি আট হাজার টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ওপরের গ্রেডে, যেখানে দক্ষ শ্রমিকেরা কাজ করেন। সেসব গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানো দরকার ছিল, সেটি  হয়নি। সে জন্য শ্রমিকেরা খুশি হতে পারেননি।

অবশ্য মালিকপক্ষ কোনো কৌশল করেনি বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কৌশল করা হয়নি। প্রত্যেক শ্রমিকের মোট মজুরি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। বেসিক (মূল মজুরি) কমতেই পারে। মোট মজুরি যত বাড়বে, বেসিক তত কমবে। তিনি বলেন, মজুরি যথেষ্ট বেড়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবারই সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে।

মজুরির বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন কারখানা–মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদেই বেশি শ্রমিক কাজ করেন। নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া আগের মজুরিকাঠামোতে গ্রেডটির মূল মজুরি ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় এই গ্রেডে কর্মরত পুরোনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে গত বছরই ৪ হাজার ৬১৫ টাকা হয়েছে। এবার নতুন কাঠামোর পরিবর্তে ইনক্রিমেন্ট হলে সেই মজুরি ৪ হাজার ৮৫১ টাকায় দাঁড়াত। তার মানে নতুন কাঠামোতে গ্রেডটিতে থাকা পুরোনো শ্রমিকদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭৯ টাকা। একইভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি বেড়েছে ১৬৪ টাকা। তবে ৩ নম্বর গ্রেডে উল্টো মূল মজুরি কমে গেছে ৪৪ টাকার মতো।

নিচের দিকের গ্রেডের মতো ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে বেশি না বাড়ায় মালিকেরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। গাজীপুরের এক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সপ্তম গ্রেডে ৫১ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। সেই হিসাবে আমাদের খরচ ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। তবে বেড়েছে ২৫-২৬ শতাংশ। কারণ হচ্ছে, ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে খুব বেশি বাড়েনি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের এক কারখানার মালিক জানান, মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর কারখানার শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ব্যয় বেড়েছে ১৪-১৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে নিম্নতম মজুরি বোর্ড হয়েছিল। এবার হয়েছে পাঁচ বছর পর। সেই হিসাবে শ্রমিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মজুরি বাড়েনি। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই সমস্যা আছে। এই গ্রেডগুলোর মজুরি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সরকার, মালিক ও শ্রমিক—তিন পক্ষ বসে পুরো বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ তাঁর।