
পুরো বাড়িটাই যেন ছোটখাটো একটি কারখানা। ১০ জন নারী কাজ করছেন। তাঁদের একজন শাড়ি ও থ্রি-পিসে বিভিন্ন ধরনের নকশার ছাপ দিচ্ছেন। অন্যরা সুই-সুতার ফোঁড় দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তুলছেন।
যশোরের শংকরপুর এলাকায় নিজের বাড়িতেই এই কারখানা গড়ে তুলেছেন রুনা লায়লা। নাম দিয়েছেন পুষ্প হস্তশিল্প। এই কারখানার মতো যশোরের সূচিশিল্পের কারখানাগুলোতে নারী কারিগরেরা এখন প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাঁদের তৈরি নকশিকাঁথা, শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবি প্রতিদিনই যশোর সদরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার নামীদামি বিপণিবিতানে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার সূচিশিল্পের শাড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা, থ্রি-পিস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, কামিজ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, নকশিকাঁথা সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রুনা লায়লার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর নকশি করা শাড়ি ও থ্রি-পিসের এত চাহিদা বাড়বে, তা আগে বুঝতে পারিনি। আগে বুঝলে বেশি টাকা লগ্নি করতাম। তাহলে ব্যবসা আরও ভালো হতো।’ তিনি বলেন, যশোর সদর ও মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৫০ নারী তাঁর কারখানায় কাজ করছেন। প্রথম রোজা থেকে এ পর্যন্ত লাখ পাঁচেক টাকার বেচাকেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ঈদ উপলক্ষে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
সূচিশিল্পের বিভিন্ন কারখানার মালিকেরা বলেন, যশোরের শংকরপুর এলাকার নকশিপণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। যশোর শহরের অভিজাত মার্কেট জেস টাওয়ারের পালকি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কের ভিআইপি মার্কেটের শৈলীতেও পাঠানো হয়।
শহরের কাজীপাড়া এলাকায়ও নিজেদের বাড়িতে অসংখ্য হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন নারীরা। সেখানকার ইয়ারুন হস্তশিল্পের স্বত্বাধিকারী রহিমা খাতুন রুমা গত রোববার বলেন, ‘আমি নিজেই শাড়ি, থ্রি-পিসে নকশা এঁকে সেলাই করার জন্য গ্রামের নারীদের কাছে কাপড় দিয়ে আসি। তারা শাড়ি ও থ্রি-পিসে নকশি তোলার কাজ করেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) যশোরের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ জামাল উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যশোরে ১০০টির মতো এ ধরনের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বিভিন্ন গ্রামের অন্তত আড়াই হাজার নারী কাজ করেন।
শেখ জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, সুই-সুতা দিয়ে হাতে নকশা করা শাড়ি ও থ্রি-পিসের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যে কারণে হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠানও দিন দিন বাড়ছে।