শিগগিরই ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ব্যয় কমে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন ব্যয় কমানোর বিষয়ে আমি নিজে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ভেটিং (পরীক্ষা- নিরীক্ষা) হয়ে গেছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী সংসদ অধিবেশন সেটি উঠবে। নিবন্ধন ব্যয় নিয়ে সমস্যা থাকছে না।’
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা। এই মেলা উদ্বোধনের সময় একথা কথা বলেন গৃহায়ণমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।
আবাসন প্রকল্প পাশে আগের চেয়ে জটিলতা কমেছে বলে উল্লেখ করেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশনা, সেবা সহজীকরণ করতে হবে। তাই টেবিলে টেবিলে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত চাহিদা মেটাবার প্রবণতা দূর করতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রকল্প পাশ করতে ১৬টি স্তরে যেতে হতো। আমরা ১২টি স্তর বাদ দিয়ে ৪টি স্তর রেখেছি। সেখানেও হয়রানির অভিযোগ। তাই আমরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি। পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে একটু সময় লাগবে। তবে এখনই অফিসে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রকল্প জমা দেওয়া যাবে।’
গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘রিহ্যাব সদস্যদের অভিযোগ ছিল, ভূমির ছাড়পত্র পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। উৎকোচ দিতে হয়। সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে ভূমির ছাড়পত্র দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নাকি বলা হতো, কিছু দিয়ে যান। যারা দিয়ে যান বলতেন—তাদের আমি বলেছি, আপনারা আমাকে পরিত্রাণ দিয়ে যান। এখন পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি কর্মকর্তাদের আমরা ভালোবাসতে পারিনি। দুদকে দিয়েছি।’
সরকারি আবাসন প্রকল্পে বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে মন্তব্য করেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা একবারে বিদেশি কোম্পানি বাদ দেব না। তবে তুরাগ নদীর পাড়ে ও কেরানীগঞ্জে নতুন স্যাটেলাইট সিটি এবং ঝিলমিল, পূর্বাচল ও উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ে ফ্ল্যাট প্রকল্পে বিদেশিদের পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠান যাতে বিনিয়োগ করতে পারে সে জন্য নিয়মকানুন শিথিল করার কাজ চলছে।’
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান করেন গৃহায়ণমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা সততার সঙ্গে আইন মেনে ব্যবসা করেন তাদের খেয়ে ফেলছে ‘টাউট বাটপার’ ডেভেলপার কোম্পানি। বুড়িগঙ্গা থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বা পূর্বাচল থেকে নরসিংদীর দিকে গেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চমৎকার সাইনবোর্ড দেখা যায়। তারা পত্রিকা ও টেলিভিশনের দৃষ্টিনন্দন বিজ্ঞাপন দেয়। সেসব দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে স্বল্প আয়ের মানুষ টাকা দিয়ে দেয়। পরে দেখা যায়, সাইনবোর্ড যেখানে ছিল সেখানে কোম্পানির কোনো জমিই নেই। দুই কাঠা জায়গা ভাড়া করে সাইনবোর্ড দিয়েছে। এসব কোম্পানি নিয়মিত ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। রিহ্যাব থেকে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রচার চালানো উচিত।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হওয়ায় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। তিনি সরকারি আবাসন প্রকল্পের দরপত্রে বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান যেন অংশ নিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে গৃহায়ণমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া ও সোহেল রানা। পরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ফিতা কেটে রিহ্যাবের আবাসন মেলার উদ্বোধন করেন। তিনি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
রিহ্যাবের নেতারা জানান, পাঁচ দিনের আবাসন মেলায় থাকছে ২৬০টি স্টল। তার মধ্যে রয়েছে ১১৬টি আবাসন প্রতিষ্ঠান, ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ৩০টি নির্মাণ সামগ্রী প্রতিষ্ঠান। আগামী শনিবার পর্যন্ত মেলা সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় একবার প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। এই টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী ৫ বার মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।