Thank you for trying Sticky AMP!!

‘সুশাসন ছাড়া ডিজিটালাইজেশন টেকসই হবে না’

প্রতীকী ছবি

আইনের শাসন নিশ্চিত না করে শুধু পরিচালনা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করলে তা কখনো টেকসই হবে না বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যে সোয়্যাস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক মুশতাক খান। তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে তাতে ক্ষমতার ও আর্থিক বৈষম্য বাড়বে। তাই পরিচালন ব্যবস্থা ডিজিটাল করার পাশাপাশি রাজনৈতিক নীতিগত সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার আয়োজিত ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনীতি সম্মেলন’-এর তৃতীয় দিনের আলোচনায় মুশতাক খান এসব কথা বলেন। তাঁর সঙ্গে সহআলোচক ছিলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (আরপিজি) বিভাগের প্রধান মেহনাজ রাব্বানী।

তাঁদের আলোচনার বিষয় ছিল ‘ডিজিটাল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সুশাসনের ভূমিকা’। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো শাহাদাত হোসেন সিদ্দিক।

আলোচনায় মুশতাক খান বলেন, ‘পরিচালন ব্যবস্থা ডিজিটাল করায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। সবার এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো আলাদা আইডি নম্বর আছে। এ কারণে আমরা সহজে আর্থিক লেনদেন করতে পারছি, যোগাযোগ করতে পারছি। কিন্তু এর নানা সমস্যাও রয়েছে। তবে এই সমস্যা ডিজিটাল ব্যবস্থার সমস্যা না, এটা আইনের শাসন ও ক্ষমতাচর্চার সমস্যা।’

দেশের ই–কমার্স ব্যবসার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে গ্রাহকেরা দ্রুত এবং সহজে পণ্যের অর্ডার করছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করছেন না বিক্রেতারা। এই সমস্যা ডিজিটালের না। আইন না থাকা কিংবা আইনের প্রয়োগ না থাকায় এমনটা ঘটছে। আগাম টাকা না দিয়ে পণ্য সরবরাহের সময়ে টাকা পরিশোধ করলে এ সমস্যা দূর হতে পারে বলে মত দেন তিনি।

সুবিধার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও ডিজিটালের বেশ কিছু ঝুঁকি আছে বলে জানান মুশতাক খান। তিনি বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে যেকোনো দেশের সরকারের কাছে মোটামুটি সব নাগরিকের তথ্য থাকে। সুশাসন না থাকলে এই তথ্যভান্ডার বিরোধী পক্ষকে দমন করতে ব্যবহার করে অনেক সরকার। কেউ মুখ খুললে দুই মিনিটেই তার ব্যক্তিগত সব তথ্য বের করে তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এ সময় ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতে ভ্রমণসহ রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা আধার কার্ডের মাধ্যমে নিতে হয়। কিন্তু আসামে যেসব মুসলিমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের আধার কার্ডের কার্যকারিতা মুহূর্তেই রহিত করে দেওয়ায় তাঁরা রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশনের অপব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে।

বাস্তবতা না ভেবে সব ব্যবস্থাকে রাতারাতি ডিজিটাল করার বিষয়েও ভিন্নমত পোষণ করেন মুশতাক খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সিংহভাগ জমির মালিকানায় জটিলতা আছে। এটিকে রাতারাতি ডিজিটাল করা ঠিক হবে না। এতে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ যার কাছে থাকবে তার অবৈধভাবে সম্পদ দখলে নেওয়ার সুযোগ থাকে। এভাবে সব বিষয়ে উন্নত দেশের মতো ডিজিটালাইজেশন করলে হবে না। দেশীয় বাস্তবতার আলোকে ধীরে ধীরে করতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও ডিজিটালি শিক্ষিত করে তুলতে হবে।’

এ সময় ডিজিটালাইজেশন নিয়ে ভারতের করা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুশতাক খান বলেন, ‘ভারত এসএমই খাতে বিপর্যয় এনেছে, আম্বানী-আদানী গ্রুপ তথ্যের একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করেছে, আধার কার্ডের মাধ্যমে বিরোধীদের বিপদে ফেলছে। এসব থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত হবে।’

আলোচনায় নারী উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন বিআইজিডির রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিভাগের গবেষক মেহনাজ রাব্বানী। তিনি বলেন, দেশের নারীদের মধ্যে ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে করোনার মধ্যে তাদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি।

মেহনাজ রাব্বানী বলেন, শহরের কম বয়সী নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি থাকলেও গ্রামীণ এবং বয়স্ক নারীদের সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম। তাঁদের অনেকের ডিজিটাল জ্ঞান নেই কিংবা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই।

সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে না পারলে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলে তাতে তো কোনো লাভ নেই। গ্রামের অনেক গৃহিণী স্মার্টফোন ব্যবহার করাকে এখনো বিলাসিতা ভাবেন।

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন না থাকাটাকেও সমস্যা মনে করছেন মেহনাজ রাব্বানী। তিনি বলেন, ছোট পর্যায়ের ব্যবসায় নারীরা ভালো ব্যবস্থাপনা করছেন। কিন্তু ব্যবসা বড় হলে যে পরিমাণ দক্ষতা দরকার হয়, তা অনেকের মধ্যে নেই। ফলে তাঁরা সমস্যায় পড়েন। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন না থাকায় তাঁদের আর্থিক লেনদেনে নানা ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত আট দিনব্যাপী এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনের জন্য অর্থনীতি’। জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গণবক্তৃতা, নির্ধারিত আলোচনা, নীতি বিতর্ক, গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন, রচনা প্রতিযোগিতা নিয়ে এবারের সম্মেলন সাজানো হয়েছে।