
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের বিষয়টি এখন আর সরকারের হাতে নেই। এটা জাতিসংঘের নির্ধারিত প্রক্রিয়া, যেখানে সব সদস্যরাষ্ট্রের মতামত গুরুত্ব পাবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এলডিসি তালিকায় থাকা তিন দেশ—বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস নিয়ে আলোচনা হবে।
অন্যদিকে এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে নেপাল ও লাওস থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের উত্তরণ পেছানোর যুক্তি নেই বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
আজ শনিবার ঢাকার পল্টনে দেশের অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান চৌধুরী এ কথা বলেন। এ সময় পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ২৬ পৃষ্ঠার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসিতে (সিডিপি) গিয়ে বলতে হবে, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য আরও সময় লাগবে। কীভাবে বলবেন—সদস্যদের তো বোঝাতে হবে যে ভাই পারব না। আমার প্রশ্ন, নেপাল, লাওস পারলে আমরা কেন পারব না? তিন বছর পেছানোর কথা বলা হচ্ছে, এটা তো পেছানো হলোই। হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কোভিডের কারণে সব দেশের জন্যই দুই বছর পিছিয়ে ২০২৬ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সরকার আগের অবস্থানেই আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। আবার এ–ও মনে রাখতে হবে, বিতর্কও অনেক সময় ছিনতাই হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা তৈরিতে তাগিদ দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ঝুঁকি নিয়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশ এগিয়ে গেছে—ঝুঁকি না নিলে এগোনো যাবে না।
কারখানা বাঁচাবেন না শ্রমিকদের বেতন-মজুরি বাড়াবেন—এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, কম্বোডিয়ার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০৮ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে মাঝখানে যখন মজুরি বাড়ল, তখনো তা ছিল ১০০ ডলারের সমান, ২০২৪-২৫ সময়ে এসেও তা ১০০ ডলার।
প্রেস সচিব বলেন, এলডিসি উত্তরণ সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শুরুতেই আনিসুজ্জামান চৌধুরীর প্রবন্ধের প্রশংসা করে বলেন, এ বিষয়ে এত স্পষ্ট বক্তব্য তিনি আগে কখনো শোনেননি। তিনি বলেন, তবে এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারও দেখেছে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আগে হিসাব করা হয়েছে। অর্থনীতি যে ‘লাইফ সাপোর্টে’ ছিল, তা আনিসুজ্জামান চৌধুরীর বক্তব্যেও এসেছে। ফলে একটা সরকার আগে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন সরকার তা নতুনভাবে সাজাতে পারত।
এলডিসি উত্তরণ নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেনি দাবি করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এলডিসি উত্তরণ হলে কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, সরকার এখনো তা বলেনি। বাংলাদেশের যে রপ্তানির পরিমাণ, তা কি লাওস ও নেপালের আছে? তাদের তো হারানোর কিছু নেই।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানোর সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি খাতেরও এখানে দায়িত্ব আছে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তাদের বলতে হবে, না পেছালে ক্ষতি কী। সময় নির্ধারণের বিষয় নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।
সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ছাড়া বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পথ মসৃণ হবে না—সেমিনারে এমন মত প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।