Thank you for trying Sticky AMP!!

ডাক্তার

সবচেয়ে বেশি আয় ডাক্তার পরিবারে

যেসব পেশাকে এ দেশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে করা হয়, সেই তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে চিকিৎসা ও প্রকৌশল। আয়ের দিক থেকেও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা অনেক পেশাজীবীর তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। পরিবারের কর্তা একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলে সেই পরিবারের উপার্জন বেড়ে যায়। এমন পরিবারে মাসিক মাথাপিছুও আয়ও তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্তও তা–ই বলছে।

বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্যানুযায়ী, চিকিৎসক পরিবারের সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। কোনো পরিবারের প্রধান একজন পুরুষ ডাক্তার হলে ওই পরিবারের সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু গড় আয় হয় ৪৬ হাজার ৯৩৮ টাকা। পরিবারের প্রধান একজন নারী ডাক্তার হলে সদস্যদের গড় আয় আরেকটু বেশি। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের গড় আয় হয় ৪৮ হাজার ৪৮৪ টাকা।

বর্তমানে দেশে প্রতি পরিবারে গড় সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ২৬। সেই হিসাবে, একটি চিকিৎসক পরিবারের মাসিক আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৫ টাকা থেকে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪১ টাকা। সারা দেশে বর্তমানে এক লাখের মতো চিকিৎসক আছেন, যাঁদের বেশির ভাগই শহর অঞ্চলে বাস করেন।

এবার দেখা যাক, প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ারদের পরিবারে আয় কেমন। যেসব পরিবারের প্রধান একজন পুরুষ প্রকৌশলী, সেসব পরিবারের সদস্যদের মাসিক গড় আয় ৪৩ হাজার ৪৩৯ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মাসে একটি প্রকৌশলী পরিবারের গড় আয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০ টাকা। তবে পরিবারের প্রধান নারী এবং পেশায় প্রকৌশলী-এমন পরিবারের আয়ের হিসাব দেয়নি বিবিএস।

তবে বিবিএস বলেছে, এই জরিপটিতে ডাক্তার ও প্রকৌশলীদের নমুনাসংখ্যা কম। তাই আয়ের এই হিসাব পরিসংখ্যানগতভাবে খুব বেশি উল্লেখযোগ্য নয়। খানা আয়-ব্যয়ের জরিপটি চূড়ান্ত করে বিবিএস সম্প্রতি তা প্রকাশ করেছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ডাক্তারদের আয়ের অনেক সুযোগ থাকে। তাঁরা চাকরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে রোগী দেখে থাকেন। এতে তাঁদের আয় অনেক বেড়ে যায়।

তবে ডাক্তারদের মধ্যে বেকারত্বের হারও বেশি বলে জানান সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ডাক্তাররা পাস করার পর কয়েক বছর তেমন একটা আয় করতে পারেন না। অভিজ্ঞ হওয়ার পর সাধারণত তাঁদের আয় বাড়ে। একইভাবে বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রকৌশলীরাও বেশি আয় করেন।

অন্য পরিবারগুলোর আয় কেমন
পরিবারের কর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পরিবারের সদস্যদের গড় আয় কত, তার একটি হিসাব দেওয়া হয়েছে বিবিএসের এই সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে। তবে একটি পরিবারে বৃদ্ধ, শিশু কিংবা উপার্জন করতে পারেন না, এমন সদস্যও থাকেন। তাই হিসাবটিতে প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যদের মোট আয়কে সব সদস্যের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

জরিপে ১১টি শ্রেণিতে ভাগ করে পরিবারের মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়েছে। এই হিসাবে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের কোনো ক্লাসেই পাস করেননি এমন পুরুষ কর্তার পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৫ হাজার ৩২৭ টাকা। অন্যদিকে, এই শ্রেণিতে নারী পরিবার প্রধান হলে সদস্যদের গড় আয় দাঁড়ায় কিছুটা কম, ৪ হাজার ২১৩ টাকা। কোনো ধরনের শিক্ষার সুযোগ পাননি—এমন পুরুষ পরিবারের কর্তা হলে সদস্যদের মাসে গড় আয় ৫ হাজার ৪৩৪ টাকা; আর নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৪ হাজার ৯৫২ টাকা।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষ পরিবারের প্রধান হলে ওই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৫ হাজার ৫৫৩ টাকা; আর পরিবারের মূল উপার্জনকারী নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৬ হাজার ৮৩০ টাকা।

অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, এমন পুরুষ যদি পরিবারপ্রধান হন, তাহলে ওই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৬ হাজার ৭৬৩ টাকা এবং পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ ৮ হাজার ৩১৩ টাকা।

এসএসসি এবং এইচএসসি ডিগ্রি আছে এমন পুরুষকর্তার পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ১০ হাজার ৯৯ টাকা। এই শ্রেণিতে পরিবার প্রধান নারী হলে সদস্যদের গড় আয় কিছুটা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৮৪৮ টাকা।

স্নাতক ডিগ্রি আছে এমন পুরুষ যদি পরিবারের প্রধান হন, তাহলে ওই ধরনের পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ১৩ হাজার ৬১ টাকা এবং পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে ৩৪ হাজার ৪৯৯ টাকা।

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কর্তার পরিবারের প্রধান পুরুষ হলে সেই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ২২৭ টাকা, আর পরিবারের কর্তা নারী হলে সদস্যপ্রতি আয়ের পরিমাণ গড়ে ১২ হাজার ৫৫৭ টাকা।

ডিপ্লোমা ও কারিগরি শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন পুরুষ পরিবারপ্রধান হলে সেই পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৯ হাজার ৬৪৪ টাকা; আর পরিবারপ্রধান উপার্জনকারী নারী হলে সদস্যদের গড় আয় ৮ হাজার ৩১৭ টাকা।

তবে পুরুষপ্রধান ও নারীপ্রধান পরিবারে সদস্যদের গড় আয়ের এই পার্থক্য কেন, সে সম্পর্কে জরিপে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে খানা আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে যেসব তথ্য পেয়েছি, সেই তথ্যই জরিপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন পেশার ও উপাজর্নকারীর আয়ের ফারাক কেন, তা হয়তো গবেষকেরা বলতে পারবেন। এখানে গবেষণার ভালো খোরাক রয়েছে।