
বর্তমানে ঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলোর একটি হলো ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর। আর এটি কিনতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষই পড়েন দ্বিধায়—দেশি ব্র্যান্ড নেবেন, নাকি বিদেশি? একদিকে দেশি ব্র্যান্ড দিচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত পণ্য, সহজ বিক্রয়োত্তরের সেবা আর দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড প্রযুক্তি। অন্যদিকে বিদেশি ব্র্যান্ডে আছে দীর্ঘদিনের আস্থা, আন্তর্জাতিক মান আর আকর্ষণীয় সব ফিচার। ক্রেতা হিসেবে কোনটা কিনবেন এবং কেন কিনবেন? এসব বিষয়েই প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ইলেক্ট্রোমার্ট লিমিটেডের (কনকা) ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার মো. জুলহক হোসাইন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিনার হোসাইন হিমু।
বর্তমানে ফ্রিজের বাজারে দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে প্রতিযোগিতা কেমন?
জুলহক হোসাইন: দেশি–বিদেশি দুই ধরনের ব্র্যান্ডের গ্রাহকই বাংলাদেশে আছেন। তবে দেশি ব্র্যান্ড বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা সাধারণত কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেশি বা বিদেশি ব্র্যান্ডের পণ্য বেছে নেন?
জুলহক হোসাইন: আমাদের দেশের ক্রেতারা ফ্রিজ কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ফ্রিজের ভেতরের স্পেস বা জায়গা কতটুকু, খাবার কত দিন ফ্রেশ থাকবে আর দামটা সাধ্যের মধ্যে আছে কি না।
দাম ও প্রযুক্তির দিক থেকে দেশি ও বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের মধ্যে পার্থক্য কী?
জুলহক হোসাইন: প্রযুক্তির দিক থেকে দেশি ফ্রিজগুলো বিদেশি ফ্রিজের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই; বরং বিদেশি ফ্রিজগুলোর অধিকাংশই তৈরি হয় আমাদের দেশের চাহিদা বিবেচনা না করে। অন্যদিকে আমরা যারা দেশে ফ্রিজ তৈরি করছি, যেমন কনকা—নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে উন্নত মানের প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে এবং দামও ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে রাখা হচ্ছে।
কোন ধরনের ফিচার বা সুবিধা বিদেশি ফ্রিজে পাওয়া যায়, যা সাধারণত দেশি ফ্রিজে থাকে না?
জুলহক হোসাইন: বর্তমানে আমাদের দেশে যে ফ্রিজগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর ফিচার বিদেশি ফ্রিজের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে; বরং চাহিদা বিবেচনায় দেশি ফ্রিজগুলো অনেক দিক থেকেই এগিয়ে।
দেশি ফ্রিজে বিক্রয়োত্তর সেবার ক্ষেত্রে কোন সুবিধাগুলো বেশি পাওয়া যায়?
জুলহক হোসাইন: দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজে বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে তেমন কোনো ভোগান্তি নেই। কারণ, এসব পণ্য দেশেই তৈরি হয়, তাই যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান দেওয়া যায়। অন্যদিকে বিদেশি ফ্রিজে অনেক সময় পার্টসের অভাবে গ্রাহকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়।
বর্তমানে প্রায় সব ধরনের পণ্যে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সংযোজন ঘটানো হচ্ছে। এদিক দিয়ে কোনটি এগিয়ে—দেশি না বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ?
জুলহক হোসাইন: আমি বলব, অবশ্যই দেশি ফ্রিজগুলো এগিয়ে। কারণ, দেশি ফ্রিজগুলো তৈরি হয় এ দেশের পরিবেশের নানা দিক গুরুত্ব দিয়ে।
দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজের বাজার কেমন? বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং আপনারা সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছেন?
জুলহক হোসাইন: বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্রিজের চাহিদা বছরে ৩০ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ। এই বাজার সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমরা এখনো কাঁচামালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। তাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর কাঁচামাল আমদানিতে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি না করে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে আমরা শুধু দেশের চাহিদা মেটাতে পারব না; বরং আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি বাড়াতে পারব।
ঈদ উপলক্ষে ফ্রিজের বিক্রি বাড়ে। এই সময়টায় ক্রেতাদের বাড়তি কী সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা দেশি ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী হবেন?
জুলহক হোসাইন: বাংলাদেশের ফ্রিজ বিক্রির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট কোরবানির ঈদ। সারা বছরের তুলনায় এই সময়েই ফ্রিজের বিক্রি বেশি হয়। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অফার দেয় এবং প্রচারণা চালায়।
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের রেফ্রিজারেটর নিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
জুলহক হোসাইন: কনকা এখন বাংলাদেশের রেফ্রিজারেটর বাজারের একটি বড় অংশ দখল করে আছে। প্রতিদিনই কনকার চাহিদা বাড়ছে। কারণ, আমরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করছি এবং চেষ্টা করছি, সাধ্যের মধ্যে ভালো মানের ফ্রিজ পৌঁছে দিতে।
প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত রেফ্রিজারেটর মেলায় আপনারা অংশ নিয়েছেন। পাঠক ও আপনাদের গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলার আছে?
জুলহক হোসাইন: প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত রেফ্রিজারেটর মেলায় প্রতিবছরই আমরা অংশগ্রহণ করি। এ বছরও করছি। গ্রাহকদের শুধু একটি কথাই বলতে চাই, সাধ্যের মধ্যে আপনার পছন্দের ফ্রিজ হোক কনকা। কনকা ফ্রিজ কিনুন, হ্যাপি থাকুন।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
জুলহক হোসাইন: আপনাকেও ধন্যবাদ।