
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় বিদায়ী বছরে বড় সময় ধরে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমেছে। ইতিমধ্যে সেটি আবার কাটতে শুরু করেছে। মানে ক্রয়াদেশ আসছে। তাই আমি মনে করি, নতুন বছরে আমরা ভালো করব। অন্য প্রতিযোগী দেশের চেয়ে আমাদের সম্ভাবনা বেশি। যদিও চলতি বছর আমাদের সামনে মোটাদাগে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। সেটির ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। এ যুদ্ধের কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি ওলটপালট হয়ে গেছে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমাদের পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় এখন চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এর কারণে ওই সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই শীতে ঘর গরম রাখা ইইউর বিভিন্ন দেশের মানুষে জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শীতের এই সময়টা পার করতে পারলেই সামনের গ্রীষ্মে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তারা ইতিমধ্যে জোরেশোরে জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে।
বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাসহ নানা কারণে চীন থেকে ক্রেতারা কম পণ্য কিনতে চায়। মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। ফলে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশই বর্তমানে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
এদিকে আমাদের দেশে আরও কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মাস দুয়েক আগেও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে পোশাকশিল্প খাতের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এখন শীতকাল হওয়ায় চাহিদা কিছুটা কম। আবার গ্রীষ্মকাল এলে পরিস্থিতি কী হবে, সেটি নিয়ে অনেক উদ্যোক্তাই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। ফলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এদিকে চলতি বছর শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে। নতুন মজুরি বোর্ড গঠিত হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলে তাদের মজুরি সমন্বয় করতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হলেও মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি বাড়লে ক্রেতারা দাম কিছুটা সমন্বয় করে। আবার ক্রয়াদেশও কিছুটা কমে যায়। তাই মজুরি সমন্বয় যৌক্তিকভাবে করতে হবে।
আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই চলতি বছরটা হতে যাচ্ছে ‘নির্বাচনী বছর’। ফলে বছরজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত থাকতে পারে।
২০-২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। হরতাল-অবরোধের মধ্যেও আমরা কারখানায় উৎপাদন পরিচালনা করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, দেশে গত চার বছরের মতো আগামী এক বছরও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকবে। কারখানার উৎপাদন চালানোর পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বন্দরে পাঠাতে সবার সহযোগিতা পাব।
বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনাসহ নানা কারণে চীন থেকে ক্রেতারা কম পণ্য কিনতে চায়। মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। ফলে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশই বর্তমানে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। চলতি বছর চারটি চ্যালেঞ্জ খুব জটিল আকার ধারণ না করলেই আমরা এগিয়ে যাব।