
মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ এবং ২ শতাংশ সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে বিতরণ করা হবে।
কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতা বাড়িয়ে ক্ষীরা, কচুর লতি, কাঁঠাল, বিটরুট, কালিজিরা, বস্তায় আদা, রসুন ও হলুদ চাষ, খেজুর গুড় উৎপাদন প্রভৃতি উপখাত যুক্ত করা হয়েছে।
দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষকদের মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই অর্থ যাতে প্রকৃত কৃষকেরা পান, সে জন্য তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং প্রাণিসম্পদ খাতেও ঋণ বিতরণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষি এবং পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির উপদেষ্টা ও ডেপুটি গভর্নররাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, সোনালী ব্যাংকের এমডি শওকত আলী খান, ইসলামী ব্যাংকের এমডি ওমর ফারুক খাঁন ও বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এবারের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এবার কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লিঋণ খাতে যেকোনো পরিমাণে ঋণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কৃষি ও পল্লিঋণের আওতাভুক্ত শস্য-ফসল খাতসহ অন্যান্য সব খাতে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত নতুন ঋণ বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে সিআইবি মাশুল মওকুফ করা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে এবং ২ শতাংশ সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কৃষি খাতের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন করছে। আমি মনে করি, এই অর্থ বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ না। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিকভাবে এমন চর্চা করা হয় না। সরকার টাকা দিলে আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারিআহসান এইচ মনসুর, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ডিপি নোট (১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প/সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী), লেটার অব হাইপোথিকেশন ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়া আর কোনো মাশুল গ্রহণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প রাখার প্রয়োজন নেই।
এ ছাড়া এরিয়া অ্যাপ্রোচ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে অঞ্চলভিত্তিক ফসলের উৎপাদন বা উৎপাদন সম্ভাব্যতাবিষয়ক তথ্যভান্ডার, যেমন কৃষি গবেষণা কাউন্সিল দ্বারা উদ্ভাবিত ক্রপ জোনিং সিস্টেম কিংবা খামারি অ্যাপসে সংরক্ষিত নির্দিষ্ট ফসলের অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতার তথ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নীতিমালায় এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতিতে কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে আদায়কৃত সুদ/মুনাফার কিছু অংশ সংশ্লিষ্ট এজেন্টের সঙ্গে শেয়ার/ভাগাভাগি করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালায় উল্লিখিত ফসল ঋণ, মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট উপখাতসমূহে ঋণ দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।
কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতা বাড়িয়ে ক্ষীরা, কচুর লতি, কাঁঠাল, বিটরুট, কালিজিরা, বস্তায় আদা–রসুন ও হলুদ চাষ, খেজুর গুড় উৎপাদনের ঋণ যুক্ত করা হয়েছে। অঞ্চলভেদে কৃষকের প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে ফসলভিত্তিক নির্ধারিত ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি/হ্রাস করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কার প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কৃষি খাতের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন করছে। আমি মনে করি, এই অর্থ বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ না। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিকভাবে এমন চর্চা করা হয় না। সরকার টাকা দিলে আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারি।’