Thank you for trying Sticky AMP!!

মৌসুমের শেষ দিনে ইলিশ বিক্রির ধুম, দাম চড়া

রাজধানীর মণিপুরী পাড়ার ব্যবসায়ী জন বাড়ৈ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইলিশ কেনার জন্য এসেছিলেন কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তে। অন্তত ১০ কেজি ইলিশ কেনার পরিকল্পনা তাঁর। আকার অনুযায়ী ইলিশের দরদাম শেষ করে তিনি এক কেজি সাইজের ১০টা ইলিশ নিলেন প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।

ইলিশ কেনা শেষে জন বাড়ৈ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম একটু বেশি হলেও মৌসুম শেষ হয়ে গেলে এত তাজা ইলিশ আর পাওয়া যাবে না। তখন হয়তো দু-এক জায়গায় কোল্ড স্টোরেজে রাখা ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে সেটার দাম আরও বেশি হবে বলে মনে হয়। এ জন্য একটু বেশি পরিমাণে নিলাম। এর আগে আরও দুবার ইলিশ কিনেছিলাম, তবে পরিমাণে কম। তবে এবার পুরো মৌসুমে ইলিশের দাম কমেনি।’

ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রির ওপর আগামীকাল শুক্রবার থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে এই অবরোধ শুরু হবে। এই সময়ে ইলিশ ধরা যেমন অপরাধ বলে গণ্য হবে, তেমনি ইলিশ বিক্রি করলেও আইনের আওতায় আসবেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার বাজারে তাই ক্রেতা সমাগম ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি, বিক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা গেছে। মজুত ইলিশ আজকের মধ্যে বিক্রি করার তোড়জোড় তাঁদের। তবে এতেও কমেনি দাম। বাজারে ইলিশের সরবরাহ খুব বেশি নয়, আবার বাজার থেকে ইলিশ একেবারে উধাও, তেমনও নয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মিরপুর ২ নম্বর ও কাজীপাড়া এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ৩০০ গ্রাম থেকে শুরু করে দুই কেজি পর্যন্ত ইলিশের দেখা মিলছে। এসব ইলিশ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা আর দেড় কেজি থেকে দুই কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজারের ওপরে বিক্রি হয়েছে।

তবে বাজারে মাঝারি ইলিশের চাহিদা বেশি দেখা গেছে। অনেকে বড় মাছ কিনছেন। মৌসুমের শেষ সময়ে অনেক ইলিশের পেটে যেহেতু ডিম থাকে, সেহেতু অনেক ক্রেতাকে বাজারে আলাদা করনে ইলিশের ডিমও খোঁজ করতে দেখা গেছে। তবে পেটে ডিম হয়নি এমন ইলিশের চাহিদাই বেশি।

কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা আহমদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেষ দিন হিসেবে বাজারে ইলিশের সরবরাহ ভালো। আর তিন মন মাছ আছে; আশা করি, সব বিক্রি হয়ে যাবে। তবে আমরা আশা করেছিলাম, আরও ক্রেতা আসবেন। সকালে যত মানুষ বাজারে এসেছে, বিকেলে তার চেয়ে আরেকটু বেশি আসবে। কারণ, কর্মদিবস হওয়ায় অনেকে এখনো বাজারে আসতে পারেননি, বিকেলে আসবেন। তাই বিকেলে মাছের কিছু গাড়িও বাজারে প্রবেশ করবে। আজ শেষ দিন, রাত ১২টা পর্যন্ত একটানা কেনাবেচা চলবে।’

রাজধানীর মুগদা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে কারওয়ান বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল বড় ইলিশ কিনব, তবে দাম বেশি হওয়ায় ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের দুই হালি ইলিশ নিলাম—প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা। পদ্মার ইলিশ তো পেলাম না। এগুলো ভোলার ইলিশ বলেই দিল, কেমন হবে জানি না। তবে আজকের পরে তো ইলিশ সেভাবে পাওয়া যাবে না। সে জন্য একটু বেশি করে কিনে রাখলাম, ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে।’

এদিন বাজারে ভোলা ও বরিশালের ইলিশই বেশি দেখা গেছে। দু-একজন বিক্রেতা তা ভোলার ইলিশ বলে বিক্রি করেছেন, তবে ক্রেতাদের বিশ্বাস পাননি সেভাবে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন পদ্মার ইলিশ মিলছে কম। ভোলা ও বরিশালের বাইরে চাঁদপুরের ইলিশও দেখা গেছে বাজারে। এদিকে মৌসুম শেষ হলেও এবার ইলিশের দাম না কমায় এখনো অনেকের নাগালের বাইরে ইলিশ। শেষ দিনে কিছুটা কম দামে ইলিশ পাওয়া যাবে—এই আশায় অনেকে বাজারে এলেও হতাশ হয়ে ফিরেছেন। আবার কেউ বড় ইলিশ কিনতে এসে কিনেছেন ছোট ইলিশ। অনেকে আবার জাটকাও কিনেছেন।

দাম বেশি হওয়ায় ইলিশ না কিনতে পেরে আকলিমা খাতুন নামের এক ক্রেতা রুই মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এবার ইলিশ খাওয়া হয়নি। একবার কিনেছিলাম, তা–ও ছোট। এসেছিলাম, একটা বড় ইলিশ কিনতে পারি কি না, সেই আশায়; কিন্তু দামে পোষায়নি। সে জন্য রুই মাছ নিলাম, তা–ও দাম কম নয়।’

ইলিশের দাম এবার বেশিই ছিল—বিক্রেতারাও তা স্বীকার করেছেন। এতে খুচরা বিক্রিও কমেছে। মিরপুর ২ নম্বর এলাকার ভ্রাম্যমাণ ইলিশ বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরও আমরা দিনে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাছ ফেরি করে বিক্রি করেছি। এবার সেখানে ২০ কেজি মাছ বিক্রি করতে গেলেই দিন পার হয়ে যায়। মাছের দাম বাড়তি ছিল, সবার হাতের অবস্থাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে এবার ইলিশের ব্যবসা করে খুব বেশি লাভ হয়নি।’

আজ বাজারে ইলিশ ধরা ও বিক্রির ওপর অবরোধের প্রচারণা করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা অনেকে দোকানে পোস্টার সাঁটিয়ে রেখেছেন। আবার অনেকে হাত দিয়ে ক্রেতাদের পোস্টার দেখাচ্ছেন, কাল থেকে আর ইলিশ পাওয়া যাবে না। সে জন্য আজকের মধ্যেই কাছে থাকা সব ইলিশ বিক্রি করে ফেলতে চাইছেন তাঁরা। অনেকে কিছুটা কম দামে হলেও মাছ ছেড়ে দিচ্ছেন।

কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, ‘ইলিশ আজকের মধ্যেই বিক্রি করতে হবে বলে ৮৭০ টাকা কেজিতে কেনা মাছ ৮৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে দিলাম। ৯০০ গ্রাম ওজনের কাছাকাছি এসব মাছ সাড়ে ৯০০ টাকায় সহজে বিক্রি হতো। কিন্তু শেষ দিন, মাছ রেখে দিলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি; পুঁজিও কম, খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার বদলে চালান উঠে আসাই ভালো।’