ব্যস্ত রাস্তাঘাটের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস অথবা ঘরোয়া আড্ডা—বিস্কুট সব জায়গায় এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বিস্কুট তো শুধু একটা খাবার নয়, এটা সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠল কীভাবে?
রেজাউল করিম: বাংলাদেশে বিস্কুট শুধু একটি খাবার নয়, এটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যস্ত রাস্তাঘাটের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস অথবা ঘরোয়া আড্ডা—বিস্কুট সব জায়গায় এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো চা, আর তার প্রকৃত সঙ্গী বিস্কুট। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হোক বা অফিসের আলোচনায়—এক কাপ গরম চা আর বিস্কুট যেন এক অনিবার্য যুগল। অতিথি আপ্যায়নে বিস্কুট পরিবেশন একটি চিরায়ত রীতি। বাসায় কেউ এলেই তাৎক্ষণিক চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় বিস্কুট। আবার অনেকের শৈশবের মধুর স্মৃতি মিশে আছে বিস্কুটের সঙ্গে (গ্লুকোজ, পাইন অ্যাপল)। বিস্কুট নানা উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঈদ, পূজা বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিস্কুটের প্যাক উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। আর্থসামাজিক বিশেষ করে ত্রাণ বিতরণেও বিস্কুট রাখা হয়, যা সহানুভূতি ও সহমর্মিতার প্রতীক।
বিস্কুট এখনো আমদানি হয়?
রেজাউল করিম: বর্তমান বাজারের ৫ শতাংশ আমদানি করা বিস্কুটের দখলে। যা দিন দিন আরও কমে আসছে।
বিস্কুট খাতে বিনিয়োগ কেন করলেন?
রেজাউল করিম: মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য ভোক্তার হাতে তুলে দিতেই এই খাতে বিনিয়োগ এর মূল কারণ। তা ছাড়া বড় বাজার মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজারের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগের অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে বিস্কুটের বাজার কত বড়?
রেজাউল করিম: ছোট–বড় প্রতিষ্ঠান ও বেকারিগুলো ধরলে বাংলাদেশের বিস্কুটের বাজার আনুমানিক বার্ষিক ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বৈচিত্র্য আনতে আপনাদের উদ্যোগ কী?
রেজাউল করিম: সব বয়সী সবার কাছে বিস্কুট কমবেশি প্রিয়। বিভিন্ন ভোক্তার স্বাদ ও পছন্দ ভিন্ন আর বিশ্বায়নের যুগে ভোক্তারা চলতি ধারার (ট্রেন্ডিং) পণ্য পছন্দ করে। ভোক্তার পছন্দ ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা পণ্যে নানা বৈচিত্র্য আনার জন্য চেষ্টা করি। যার প্রক্রিয়া চলমান।
রেজাউল করিম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রিদিশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও গ্রুপ রিদিশা
বিস্কুট খাতে বিনিয়োগ কেন করলেন?
শাহীদ বিন সারয়ার: বিস্কুট খাতে ড্যান কেকের বিনিয়োগ ছিল একটি সচেতন ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা বরাবরই বাংলাদেশি ভোক্তাদের জন্য ইউরোপীয় মানসম্পন্ন সুস্বাদু খাবার নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিস্কুট আমাদের প্রতিদিনের জীবনের পরিচিত অংশ—সব বয়সের মানুষ এটি উপভোগ করেন। কিন্তু আমরা বাজারে এমন একটি শূন্যতা দেখেছি, যেখানে স্বাদ, গুণমান ও আন্তর্জাতিক মানের সমন্বয় নেই। ভোক্তারা এমন কিছু খুঁজছিলেন, যা শুধু খেতে ভালো নয়, বরং পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো গর্বেরও।
বৈচিত্র্য আনতে আপনাদের উদ্যোগ কী?
শাহীদ বিন সারয়ার: বৈচিত্র্য আনতে আমরা আমাদের পণ্যের পরিসর বিস্তৃত করেছি—বর্তমানে আমাদের আছে ২৭ ধরনের কেক এবং ৬ ধরনের ড্রাই কেক ও বিস্কুট। এসব পণ্যে ব্যবহার করা হয়েছে নানা ধরনের বিশেষ উপকরণ ও স্বাদের সমন্বয়—ক্ল্যাসিক বাটার ও চকলেট থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর ওটস, কালোজিরা ও তিলের মতো উপাদানও রয়েছে। আমাদের জনপ্রিয় কুকিজগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্যানিশ বাটার কুকিজ, ওটস কুকিজ ও সল্টেড কুকিজ। তবে এখানেই থেমে নেই। আমরা ভোক্তা চাহিদা পূরণে নতুন নতুন আরও পণ্য আনার কাজ করছি।
একসময় যেটি ছিল কেবল একটি সহজ স্ন্যাক, এখন তা হয়ে উঠেছে আমাদের বিকেলের চায়ের সঙ্গী
বিস্কুট সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠল কীভাবে?
শাহীদ বিন সারয়ার: বিস্কুট এখন বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে—এটি এক অনন্য সংস্কৃতির বিবর্তন। একসময় যেটি ছিল কেবল একটি সহজ স্ন্যাক, এখন তা হয়ে উঠেছে আমাদের বিকেলের চায়ের সঙ্গী, আতিথেয়তার অংশ, এমনকি শৈশবের মিষ্টি স্মৃতির অংশও। বাংলাদেশে চা শুধু একটি পানীয় নয়, এটি এক সামাজিক অভিজ্ঞতা। আর বিস্কুট তার একেবারে স্বাভাবিক সঙ্গী হয়ে উঠেছে। অফিসের বিরতি হোক, পারিবারিক আড্ডা কিংবা অতিথি আপ্যায়ন—চায়ের সঙ্গে বিস্কুট পরিবেশন যেন আমাদের অভ্যাসেরই অংশ।
শাহীদ বিন সারয়ার
প্রধান বিপণন কর্মকর্তা, ড্যান ফুডস লিমিটেড