এম নাজিম এ চৌধুরী
এম নাজিম এ চৌধুরী

সাক্ষাৎকার

সিএমএসএমই খাত অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পার

বাংলাদেশে এসএমই খাত অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে ৭৮ থেকে ৮০ লাখ সিএমএসএমই রয়েছে এবং এটি দেশের মোট কর্মসংস্থানের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ও জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখে। বলেছেন প্রাইম ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নাজিম এ চৌধুরী

প্রশ্ন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসএমই ব্যবসা খাতের চিত্র কেমন এবং কী হওয়া উচিত?

এম নাজিম এ চৌধুরী: বাংলাদেশে এসএমই খাত অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে ৭৮ থেকে ৮০ লাখ সিএমএসএমই রয়েছে এবং এটি দেশের মোট কর্মসংস্থানের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ও জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখে। তবে এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় তারা ব্যাংকিং সুবিধা ও সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসএমই খাতকে আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। যেমন সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানতবিহীন ঋণ প্রদান বাধ্যতামূলক করা, ঋণপ্রক্রিয়া সহজতর করা, নীতিগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা চালু করা, ডিজিটাল রেকর্ড ও ক্রেডিট স্কোরিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সেবাগুলোকে সহজসাধ্য ও কার্যকর করা। 

প্রশ্ন

এই খাতে আপনাদের ঋণের পরিমাণ ও গ্রাহকসংখ্যা কেমন?

এম নাজিম এ চৌধুরী: প্রাইম ব্যাংক সিএমএসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে এই খাতে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি এবং ১১ হাজার ৫০০-এর অধিক সক্রিয় ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকের মোট সিএমএসএমই গ্রাহকের সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি, যা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ। ব্যাংকটি এ খাতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, সহজতর ঋণপ্রাপ্তি এবং উদ্যোক্তা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে সিএমএসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্ন

এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার বাস্তব চিত্রটা আসলে কেমন?

এম নাজিম এ চৌধুরী: বাংলাদেশে এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার বাস্তব চিত্রটি এখনো বেশ চ্যালেঞ্জিং। যদিও এ খাতে ঋণের চাহিদা অনেক, তবে অনেক উদ্যোক্তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঋণ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। বিশেষ করে অনেকেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স কিংবা ট্রানজেকশন রেকর্ড নেই, যা ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার অন্যতম শর্ত। ব্যাংকের প্রথাগত ঋণপ্রক্রিয়া ও জটিল কাগজপত্রের কারণে নতুন বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজেই পিছিয়ে পড়েন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য চিত্রটি আরও কঠিন; কারণ, তাঁরা পরিবার বা সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রয়োজনীয় সাহায্যটুকু অনেক ক্ষেত্রে পান না। অনেক সময় উদ্যোক্তারা ঋণের শর্তাবলি ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না, যার ফলে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেন না। রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হতো। 

প্রশ্ন

ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে?

এম নাজিম এ চৌধুরী: ব্যাংকঋণের সুদহার মূলত বাজারভিত্তিক হওয়ায় এটি সময় ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসায়িক খরচ বাড়লেও এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের খরচ কমাতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়িয়ে ব্যবসা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা আরও পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। ভবিষ্যতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথকে আরও মসৃণ করে তুলবে।

প্রশ্ন

ঋণ বিতরণ ও আদায় কেমন হচ্ছে?

এম নাজিম এ চৌধুরী: দেশের সার্বিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণ কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে ভালো, পরিচ্ছন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কযুক্ত ক্লায়েন্টদের ঋণ অনুমোদন চলছে। খেলাপি নির্ণয়ে নতুন নিয়ম পরিপালন করার জন্য ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। 

প্রশ্ন

বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় অনেক উদ্যোক্তা চাপে পড়েছেন, এসএমই খাত কেমন করছে?

এম নাজিম এ চৌধুরী: বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পুনঃ অর্থায়নের সুবিধা, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রামের সহায়তায় এসএমই খাত তুলনামূলক নমনীয় ও টিকে থাকার চেষ্টা করছে; তবে চাহিদা হ্রাস, মূল্যস্ফীতি ও রিসোর্স–সংকট এ খাতেও ধাক্কা দিচ্ছে। যারা প্রযুক্তি বা অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় এসেছে, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো করছে। 


এম নাজিম এ চৌধুরী

উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি