
মানুষের প্রয়োজনীয়তা থেকেই বিমার উৎপত্তি হয়। দেশে স্বাধীনতার আগে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৪৯টি বিমা কোম্পানি ছিল। স্বাধীনতার পর সংখ্যাটি বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বিমা পেশায় ছিলেন। তারপরও সম্ভাবনাময় বিমা খাত পিছিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে বিমা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
বিমা খাতের সেকেলে প্রচার-প্রচারণার কারণেই এমনটি হয়েছে। আজ অবধি কোনো বিমা কোম্পানি বিজ্ঞাপন তৈরি করে বিমার সুফলগুলো মানুষকে বোঝাতে পারেনি। অথচ ভারত, থাইল্যান্ড, আমেরিকা প্রভৃতি দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন মানুষকে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে ও আনন্দ দিয়েছে। এসব বিজ্ঞাপন বিমা শব্দটাকে মানুষের মধ্যে আপন করে নেওয়ার রসদ জুগিয়েছে। আমরা তা পেরেছি কই?
এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে বিমা কোম্পানিগুলোর দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়নি। আবার কিছু কোম্পানির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ বিমায় সিকিভাগও আস্থা রাখতে পারছে না। আরেকটা বিষয়, সিংহভাগ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা। প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারা, গ্রাহক সেবা ঠিকঠাক দিতে না পারা, দাবি পরিশোধে গড়িমসি ইত্যাদি কারণে এই সম্ভাবনাময় খাত গ্রাহক হারিয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য চালু করা দরকার। এটি বিমা পণ্যগুলোকে আরও সহজলভ্য করে দেশের বিমাশিল্পকে এক নতুন রূপ দিতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি মানুষের ব্যাংক হিসাব থাকলেও একটি বড় জনগোষ্ঠী বিমার আওতায় নেই। তারা ব্যাংকের মাধ্যমেই বিমা–সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
ব্যাংকেই প্রিমিয়াম জমা দেবে। দেশের প্রায় ১১ হাজার ব্যাংক শাখার মাধ্যমে সরাসরি বিমা–সংক্রান্ত তথ্য ও সুবিধা মিলবে। এটি বিমা খাতের জন্য ইতিবাচক হবে এবং বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক ও বিমা উভয় খাতের আয় বাড়বে।
শেখ রকিবুল করিম
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্স।