মো. নাসির খান
মো. নাসির খান

অভিমত

বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের জুতা রপ্তানির সক্ষমতা আছে দেশের কারখানাগুলোর

পাল্টা শুল্ক আরোপের পর মার্কিন ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরাচ্ছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জুতার ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। এর ফলে কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে নতুন ক্রয়াদেশ পেয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ পাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

অবশ্য মার্কিন বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়া আমাদের জন্য কিছু কঠিন। কারণ, আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। আমরা সবচেয়ে বেশি ভুগছি বন্ড জটিলতায়। ধরুন, আমার প্রতিষ্ঠান দেড় লাখ জোড়া জুতার ক্রয়াদেশ পেয়েছে। এই জুতার পুরো কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতার অনুমতি দেয় না বন্ড কর্তৃপক্ষ। আমাদের ভাগ ভাগ করে কাঁচামাল আনতে হয়। তাতে সময়সমতো পণ্য জাহাজীকরণ আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এ কারণেই আমাদের জুতা রপ্তানি বছরের পর বছর ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের আশপাশেই ঘুরছে। অথচ দেশে রপ্তানিমুখী ১০০-এর বেশি কারখানায় যে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আছে, তাতে বছরে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করা সম্ভব। অর্থাৎ, এখনই বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের জুতা রপ্তানির সক্ষমতা দেশের কারখানাগুলোর আছে।

বন্ড জটিলতা নিরসনে মূল্য সংযোজনের শর্ত দিয়ে কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত। যেমন ১০০ ডলারের কাঁচামাল আনলে ১২৫ ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি না করলে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর শুল্ক আরোপ হবে, এমন ব্যবস্থা করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চীন, কোরিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা চালু করে উন্নতি করেছে।

আমাদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, সাভারের চামড়াশিল্প নগরের দূষণ। এ কারণে আমাদের চামড়া বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলো কিনছে না। চামড়াশিল্প নগরের ব্যবস্থাপনা বিসিকের কাছ থেকে নিয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেটি হলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন হলেও জুতাশিল্প বরাবরই শ্রমনিবিড়। সে কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় একটা জায়গায় এগিয়ে রয়েছে। শ্রমিকের কম মজুরির জন্য বাংলাদেশ যে দামে জুতা দিতে পারে, তা অন্য দেশ পারে না। সে জন্য মার্কিন পাল্টা শুল্কের কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটি কাজে লাগাতে আমাদের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

মো. নাসির খান, সহসভাপতি, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)