Thank you for trying Sticky AMP!!

এত টাকা নিলেন কীভাবে

ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা এক ভিআইপি গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু প্রশ্ন, সেই টাকা গ্রাহক নিলেন কীভাবে?

ব্যাংক খোলা রাখার সময় (সন্ধ্যা ৬টা) শেষ হওয়ার পর গত রোববার একজন গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) গ্রাহককে ১৯ কোটি টাকা নগদ দেওয়া হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে। ব্যাংকটিও এমন দাবি করেছে। ব্যাংকের ভল্ট থেকে এক গ্রাহককে নগদে টাকা দেওয়ার বিপরীতে জমা রাখা হয় চেক। পরে গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সেই চেক জমা করে ভল্টের টাকার হিসাব সমন্বয় করা হয়।

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভল্ট থেকে টাকা সরানোর সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ইকবাল। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে লিখিত বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়।

এদিকে ব্যাংকের ভল্টে ১৯ কোটি টাকা কম পাওয়ার ঘটনায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভল্ট থেকে টাকা সরানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করলেও এ ঘটনায় গুলশান শাখার তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম জানা যায়নি। পাশাপাশি ব্যাংকের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের আলাদা দুটি সূত্র জানিয়েছে, যে ভিআইপি গ্রাহককে ভল্ট থেকে নগদ দেওয়ার পর ১৯ কোটি টাকার চেক জমা রাখা হয়েছিল, ওই গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে এত টাকার লেনদেন আগে কখনো হয়নি। এমনকি রোববার ওই হিসাব থেকে ১৯ কোটি টাকা তোলার মতো টাকাও ছিল না। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ওই হিসাবে ১৯ কোটি টাকা জমাও হয়নি। এ জন্য ভল্টের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রকৃত ঘটনা তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

Also Read: ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার

এদিকে, বিভিন্ন ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাংকে ভরে টাকা আনা-নেওয়া করে। সে ক্ষেত্রে এক হাজার টাকার নোট হলে এক ট্রাংকে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা নেওয়া সম্ভব। একইভাবে দুই মণের বস্তায় ২ কোটি টাকা আনা-নেওয়া করা যায়। আর ৫০০ টাকার নোট হলে এক বস্তায় এক কোটি টাকার বেশি ধরে না। ফলে রাতের আঁধারে একসঙ্গে ১৯ কোটি টাকা নিতে ভিআইপি গ্রাহক কোন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করেছেন, তা নিয়েই গতকাল ব্যাংকপাড়ায় ছিল নানা মুখরোচক আলোচনা। একসঙ্গে ১৯ কোটি টাকা নেওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে ব্যাংকটির গুলশান শাখায় কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান কার্যালয়ের টাকার প্রয়োজন হলেই ভল্ট থেকে টাকা বের করা হয়। এ জন্য রাত-দিনের অপেক্ষা করা হয় না। গুলশান শাখা থেকে মূলত প্রধান কার্যালয়ের টাকার জোগান দেওয়া হয়। একই ভবনেই গুলশান শাখা ও ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়।

গত সোমবার ব্যাংকটির গুলশান শাখায় পরিদর্শনে গিয়ে ভল্টের টাকার হিসাবে গরমিল দেখতে পান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কাগজপত্রে ওই শাখার ভল্টে যে পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য রয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি টাকা কম পাওয়া যায়। শাখাটির নথিপত্রে দেখানো হয়েছিল, ভল্টে ৩১ কোটি টাকা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুনে পেয়েছেন ১২ কোটি টাকা। বাকি ১৯ কোটি টাকার ঘাটতি সম্পর্কে শাখাটির কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলকে যথাযথ কোনো জবাব দিতে পারেননি তাঁরা। এ ঘটনায় ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত চিঠি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

Also Read: ভিআইপি গ্রাহকের জন্য ব্যাংকিং সময়ের পরও ভল্ট খুলে টাকা দেওয়া হয়

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, ভল্টের টাকার গরমিল থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হয়। কিন্তু ব্যাংকটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ব্যাংকটির এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে ও ব্যাংকে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি

ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ইকবাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত রোববার ব্যাংকিং লেনদেন শেষে সন্ধ্যার পরে শাখায় একজন গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক নগদ টাকা নেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। গ্রাহকের গুরুত্ব এবং ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক বিবেচনায় তাঁর কাছ থেকে চেক জমা রেখে নগদ টাকা প্রদান করা হয়। পরের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা দলের উপস্থিতিতে গ্রাহকের চেকের মাধ্যমে উক্ত টাকা সমন্বয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের অর্থ হারানোর মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত, বিনিয়োগ ও সম্পদের দিক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংকই সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। এটি ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের সীমাহীন আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার ফসল বলে আমরা মনে করছি।’

Also Read: ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টে টাকার হিসাব মিলছে না