Thank you for trying Sticky AMP!!

জীবন সহজ করেছে ক্রেডিট কার্ড

একসময় ক্রেডিট কার্ড আভিজাত্যের প্রতীক হলেও বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

করোনার এ সময়ে লেনদেনে বেড়েছে কার্ডের ব্যবহার

ঢাকার তাপমাত্রা বছর বছর বাড়ছে। মাঝেমধ্যে তীব্র গরমে ঘরে টেকাই দায় হয়ে পড়ে। একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) কিনতে পারলে মন্দ হতো না, ভাবতে ভাবতে গত মাসে কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে ফেললেন শিহাব উদ্দিন। কিন্তু দাম দেখে চিন্তায় পড়ে গেলেন বেসরকারি এই চাকরিজীবী। দেড় মাসের বেতন যোগ করলে দেড় টনের একটা এসি মিলবে।

একদিকে মাসের শেষ। পকেট গড়ের মাঠ। উপায় কী? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আলমারির এক কোনায় সযত্নে পড়ে থাকা ক্রেডিট কার্ডটির কথা মনে পড়ল। দ্রুত মোবাইলের ক্যালকুলেটর টিপে হিসাব কষলেন। মাসে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা কিস্তি দিলেই চলবে। ১২ মাস দিলেই মুক্তি। আর মাসের যে বেতন, তাতে টেনেটুনে এসির জন্য ৬-৭ হাজার টাকা বের করা যাবে। যদিও অন্যান্য খরচে হালকা লাগাম টানতে হবে। যা–ই হোক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে দোকানের পথে পা বাড়ালেন।

গরম নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেছে শিহাবের। বললেন, ‘আমার মতো মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ক্রেডিট কার্ড সত্যিই আশীর্বাদ। ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি সুবিধার সেবাটি না থাকলে নগদ টাকায় প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কেনা সম্ভব হতো না। তবে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। না হলে চড়া সুদে ঋণ শোধ করতে করতে বছর চলে যাবে।’

শিহাবের মতো অনেকের প্রয়োজনে বড় ভরসা ক্রেডিট কার্ড। একসময় ক্রেডিট কার্ড আভিজাত্যের প্রতীক হলেও বর্তমানে এটি জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। চলে এসেছে সাধারণের নাগালের মধ্যে। সাধারণ মানুষের মধ্যে কার্ডকে জনপ্রিয় করতে নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেওয়া হয়। ফলে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক

হঠাৎ জরুরি প্রয়োজনে টাকার প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ড বড় সমাধান হয়ে এসেছে। তা ছাড়া ইলেকট্রনিক, আসবাব, পোশাক, গাড়ি, ভোগ্যপণ্যসহ অনেক কিছু বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনা যাচ্ছে। দামি পণ্যের ক্ষেত্রে কিস্তির সুবিধাও মিলছে। হাসপাতালে বিলও দেওয়া যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে। পকেটে টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই, একটি ক্রেডিট থাকলেই খাওয়াদাওয়া কিংবা বাস-ট্রেন-বিমানের টিকিট কেনাও সহজ হয়ে যায়।

করোনায় বিদেশ ভ্রমণে নানা রকম বিধিনিষেধ চলছে। সে কারণে অনেকের পক্ষেই দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিদেশ ভ্রমণ সহজ করতে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড নেন। এ জন্য দ্বৈত মুদ্রার ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু করেছে অনেক ব্যাংক। সেই কার্ড দিয়ে দেশের ভেতরে টাকায় ও বিদেশে ইউএস ডলারে কেনাকাটা, হোটেল ভাড়া ইত্যাদি সেবা পাওয়া যায় সহজে। আবার ক্রেডিট কার্ড থাকলে বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহার করা যায়। ফলে আকাশপথের ভ্রমণ অনেকটাই সহজ হয়েছে।

জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (রিটেইল) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে গত মাসে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করে। তারপর থেকেই ক্রেতারা ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। নিত্যপণ্য ছাড়া কেউ কিছু কিনছে না। অবশ্য গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, লকডাউন শেষে আগের অবস্থায় ফিরতে খুব একটা সময় লাগে না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অনেক লেনদেনই ক্যাশ টাকায় হয়। সেগুলো কার্ডের মাধ্যমে করতে চান অনেকে। আবার অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে। এ জন্য আমরাও কার্ডে নতুন নতুন সেবা আনতে কাজ করছি।’

প্রতিটি কার্ড ব্যবহারের জন্য বার্ষিক একটা মাশুল দিতে হয় গ্রাহকদের। তবে কার্ড থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করলে সেই মাশুল থেকে মুক্তি মিলে। অন্যদিকে কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে অধিকাংশ ব্যাংকই নানা রকম মূল্যছাড় দেয়। ব্র্যান্ডের পোশাক, ইলেকট্রনিক, জুতা, হোটেল-রিসোর্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য বা সেবা কিনলেই ছাড় মিলছে।

প্রতি মাসে কার্ডের বিল জমা দেওয়াটা অনেকের কাছেই ঝামেলা পূর্ণ মনে হয়। অর্থ জমা দেওয়ার শেষের দিনগুলোতে ব্যাংকে প্রচুর ভিড় থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে এ কাজও সহজ হয়েছে। একাধিক ব্যাংকের কার্ডের বিল বর্তমানে মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে ঘরে বসেই জমা দেওয়া যাচ্ছে। আবার অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও কার্ডের বিল দেওয়া যায়।

সঞ্চয় সরকার বিয়ে করেছেন বছর চারেক হলো। বিয়ের আগে মেসে থাকতেন। বিয়ের পর যখন নতুন বাসা নিলেন, তখন অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয়েছে। প্রচুর টাকার মামলা। বললেন, বিয়ের পরপর লাখ তিনেক টাকার আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য কিনতে হয়েছে। পকেটে টাকা ছিল না। ক্রেডিট কার্ডই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কার্ডের কিস্তির সুবিধা নিয়ে সব জিনিস কিনেছি। মাসে মাসে অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করেছি।