Thank you for trying Sticky AMP!!

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেশে প্রথম যিনি দিয়েছিলেন

কালোটাকার উৎস বন্ধ নয়, বরং কালোটাকা সাদা করার দিকেই সরকারগুলোর আগ্রহ বেশি। যদিও সরকারের প্রথম উদ্যোগটি ছিল কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।

যেমন ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল সরকারের হঠাৎ এক ঘোষণায় ১০০ টাকার নোট অচল করা হয়েছিল। সে সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন এ আর মল্লিক। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির চাপ প্রশমিত করা ও অর্থনীতিতে কালো ও বাড়তি টাকার অশুভ প্রভাব দূর করা।’

দেশে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রথম দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের অধীনে। সেই শুরু, এরপর থেকে সব সরকারই তা অব্যাহত রেখেছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত বেশি দিন ধরে রাখা যায়নি। বিশেষত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মোশতাক সরকার এ সিদ্ধান্ত আর তেমন কার্যকর করেনি। আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বরং মোশতাক সরকার ক্ষমতায় বসেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার আলোচনা শুরু করেছিল। তবে মোশতাক সরকারের আয়ু ছিল মাত্র ৮১ দিন। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রথম দেয় জিয়ার সামরিক সরকার।

কালোটাকা সাদা করার প্রথম উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৭৪ সালের শিল্পনীতি সংশোধনের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের ৭ ডিসেম্বর এই সংশোধনের ঘোষণা এসেছিল। সংশোধিত সেই শিল্পনীতিতে অব্যবহৃত ও নিষ্ক্রিয় তহবিল উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না বলে ঘোষণা ছিল।

শিল্পনীতিতে বলা ছিল, ‘অব্যবহৃত ও পড়িয়া থাকা তহবিলকে উৎপাদনের কাজে লাগানোর জন্য এবং পুঁজি বিনিয়োগ বাতিল করা ইউনিটগুলিতে বিনিয়োগ অথবা ক্রয়ের জন্য বলা হইয়াছে যে যাঁহারা উক্ত অব্যবহৃত তহবিল প্রকাশ করিবেন, তাঁহাদের কোনো রকম প্রশ্ন না করিয়া সরকার সেই তহবিল রাখিতে দিবেন এবং সেই তহবিল নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার অথবা পুঁজি প্রত্যাহারকৃত শিল্প ইউনিট ক্রয়ে ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হইবে। ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাইবে, তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ১৯৭৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হইবে।’

Also Read: করোনাকালেও কালোটাকার ঢল

তবে কালোটাকা সাদা করার সবচেয়ে বড় ঘোষণাটি দেওয়া ছিল সামরিক আইনের অধীনে। যেমন ১৯৭৫ সালে জারি করা সামরিক আইনের ৬ নং আদেশে ‘কর-অনারোপিত আয়ের’ ঘোষণার জন্য ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ সময় ২৫ শতাংশ কর দিয়ে অর্থ সাদা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এ নিয়ে ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় (১৯৭৭ সালের ২৫ জুন) রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন যে সরকার ৬ নং সামরিক আইনের অধীনে করদাতাদের তাঁদের কর-অনারোপিত প্রকৃত আয়ের ঘোষণার জন্য ১৯৭৬ সালের ৩০ জুর পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে অনেকে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি বলে আবেদন-নিবেদন বিবেচনা করে সরকার তাঁদের কর-অনারোপিত প্রকৃত আয়ের ঘোষণার জন্য এ বছর ৩০ জুন পর্যন্ত আর একবার সুযোগ দিয়েছেন। এতে কোনো রেয়াতি হারের সুযোগ দেওয়া হয়নি, কিন্তু দণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় যে করদাতারা তাঁদের এখনো অপ্রকাশিত আয় ঘোষণার এই শেষ সুযোগ হারাবেন না। কেননা, এর পরে কর ফাঁকির কেসসমূহের ব্যাপারে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়া হুমকি দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু যাঁরা সুযোগ নেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আর নেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সেই শুরু। এরপর থেকে দেশের প্রতিটি সরকার নিয়মিতভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়েছে, আর সুযোগ নেয়নি, এমন কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে দেখা যায়নি।