বাজেট ২০২২–২৩

ভ্যাটে ফোনের দাম বাড়বে ৩০%

শাওমি, ভিভো, রিয়েলমি ও অপো বাংলাদেশ—এই চার মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে।

  • ব্যবসায়ের প্রতিটি স্তরে ৫% হারে ভ্যাট বসবে।

  • চাহিদার ৯০% ফোন দেশেই উৎপাদিত হয়।

  • বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফোন বিক্রি হয়।

কোভিড–১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও করপোরেট চাকরিজীবীদের কাছে স্মার্টফোনের কদর বেড়েছে। কারণ, স্মার্টফোনের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে, আর চাকরিজীবীরা অফিস মিটিংয়ে অংশ নিতে পেরেছেন। কিন্তু এবারে সেই স্মার্টফোনের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে ব্যবসায়িক পর্যায়ে মোবাইল ফোনে দেওয়া ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দেশে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে, আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় দেশের বাজারে স্মার্টফোনের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে। তাদের দাবি, কারখানা থেকে জাতীয় ও স্থানীয় পরিবেশক এবং দোকানদার পর্যায়ে কয়েক হাত ঘুরে মোবাইল ফোন ক্রেতার হাতে যাবে। এতে প্রতিটি স্তরে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে।

শাওমি, ভিভো, রিয়েলমি ও অপো বাংলাদেশ—এই চারটি মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ভ্যাট বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন এসব কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা ব্যবসায়িক পর্যায়ে আগের মতো ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল করার দাবি জানান। চার কোম্পানির দাবি, দেশে মোবাইল ফোনের বাজারে ৫৮ শতাংশ হিস্যা তাদের দখলে রয়েছে।

‘মোবাইল ফোনের দাম যদি ২০-২৫ শতাংশ বেড়ে যায়, তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হবে। মোবাইল ফোন দেশের সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এতে বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার

চার কোম্পানির চিঠিতে বলা হয়েছে, উৎপাদন পর্যায়ে একটি স্মার্টফোনের দাম যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে নানা ধরনের শুল্ক-কর যুক্ত হওয়ার পর সেটির দাম দাঁড়াবে ১২০ টাকা। কিন্তু কারখানা, পরিবেশক, ডিলার ও খুচরা বিক্রি পর্যায়ে বাড়তি ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হলে ওই স্মার্টফোনটির দাম বেড়ে দাঁড়াবে ১৪৩ টাকা। কারখানা থেকে মোবাইল ফোনটি বের হয়ে যতবার হাতবদল হবে, ততবার দাম বাড়বে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মোবাইল ফোনের তিন থেকে চারটি স্তরের ব্যবসায়ের প্রতিটি স্তরে যদি ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসে, তাহলে একেকটি মোবাইল ফোনের খুচরা মূল্য ২৫-৩০ শতাংশ বাড়বে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন মোবাইল ফোন তৈরির কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতেই মোবাইল ফোনের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ১২-১৪ শতাংশ বেড়েছে। তাই নতুন করে আরও ২৫-৩০ শতাংশ দাম বাড়লে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ছড়িয়ে পড়বে বলে কোম্পানিগুলো মনে করে।

এ বিষয়ে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনের দাম যদি ২০-২৫ শতাংশ বেড়ে যায়, তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হবে। মোবাইল ফোন দেশের সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এতে বাংলাদেশে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে। আমরা “স্মার্ট বাংলাদেশ” রূপকল্প অর্জনে সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে কাজ করতে চাই।’

জিয়াউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে মোবাইল ফোন শিল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের এইচএস কোডের পরিবর্তন আনায় অতিরিক্ত ২-৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হবে।

এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ের প্রতি স্তরে যাতে ভ্যাট আরোপ না হয়, সেই পথ খোঁজা হচ্ছে। ভ্যাট কর্মকর্তারাও প্রতিটি স্তরে ভ্যাট আরোপ করা হলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন। ভ্যাট বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট পাস হওয়ার আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

পাঁচ কোম্পানির দখলে ৬৮ শতাংশ বাজার

দেশে মোবাইল ফোনের যত চাহিদা রয়েছে, তার সিংহভাগই দেশে প্রস্তুত হয়। মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি–মার্চ) সারা দেশে সাড়ে ২৮ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে।

সেই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ কোটির কমবেশি ফোন বিক্রি হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিভো, রিয়েলমি, স্যামসাং, অপো ও শাওমি বাংলাদেশ—এই পাঁচটি কোম্পানি সব মিলিয়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগ ফোনই এখন বাংলাদেশে বানানো হয়।

মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফোন বিক্রি হয়। মোবাইল ফোন উৎপাদন খাতটি এখন দেশের অন্যতম সঞ্চরণশীল খাত।

সব মিলিয়ে ১০-১২টি কোম্পানি এই খাতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। এসব কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরীণ মোবাইল ফোনের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পূরণ করে। এই খাতে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।