আইএমএফের লোগো
আইএমএফের লোগো

আইএমএফের প্রতিনিধিদল আসছে এ মাসে, রাজস্ব আয়ের শর্ত পূরণ হয়নি

চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল আবারও ঢাকায় আসছে। ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। ওই সভার পর আইএমএফের দলটি ঢাকায় আসবে ২৯ অক্টোবর। দলটি বাংলাদেশে থাকবে দুই সপ্তাহ।

আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বাধীন দলটি শুরু থেকে পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এ জন্য দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে।

বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালের জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৩ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

সাত কিস্তিতে সাড়ে তিন বছরে আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার দেবে বলেছিল। আইএমএফ থেকে মোট পাওয়া গেছে ৩৬৪ কোটি ডলার। বাকি আছে ১০৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে গত জুন মাসে আইএমএফের পর্ষদ বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়িয়েছে ছয় মাস এবং বাড়তি ৮০ কোটি ডলারও যুক্ত করেছে। কিস্তির সংখ্যাও এখন ৭ থেকে বেড়ে ৮টি হয়েছে। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি বেড়ে এখন ৫৫০ কোটি ডলারের হয়েছে। ফলে মোট পাওয়ার বাকি এখন ১৮৬ কোটি ডলার। আর নতুন সময়সীমা অনুযায়ী ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে।

নতুন শর্ত ও কিউপিসি পূরণ

আইএমএফের এবারের দল সংস্থাটির ‘পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড’ (কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটারিয়া বা কিউপিসি) পূরণ নিয়ে বেশি আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। কিউপিসি হচ্ছে আইএমএফের বাধ্যতামূলক শর্ত। গত মে মাসে কিউপিসির কিছু শর্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ, জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ। এ তালিকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্তও আছে। এসব শর্ত পূরণ না হলে আইএমএফ পরের কিস্তি দেয় না। তবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ চাইলে কোনো কোনো শর্তের বিষয়ে পূর্ণ বা আংশিক অব্যাহতি দিতে পারে। আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরে ৮৪৪ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ নিতে পারবে না বাংলাদেশ। আইএমএফ তিন মাস পরপর বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) থাকার কথা ১ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার। তার বিপরীতে জুন শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রাও সন্তোষজনক পর্যায়েই আছে। দুশ্চিন্তা শুধু রাজস্ব আদায় নিয়ে। শর্ত অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার বিপরীতে এনবিআর আদায় করেছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আগে তিনবার অর্জন করা হয়নি। এখন অর্জন করা না গেলে অব্যাহতি নিতে হবে। অব্যাহতি আর পাওয়া যাবে কি না, তা একটা বড় প্রশ্ন। এটা নিয়ে আলোচনা চলবে বোঝা যাচ্ছে। জাহিদ হোসেন আরও বলেন, মুদ্রা বিনিময় হারের চর্চাটা বদলে গেছে। এখন আর বলে দেওয়া হচ্ছে না কত হবে। আর ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা আগের মডেলেই করা হয়েছে। এসব নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে আইএমএফ।

বদলে গেছে কিস্তির সংখ্যা ও হার

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগের হিসাব অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তিতে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ৫৩ কোটি ডলার করে। ষষ্ঠ কিস্তি পাওয়ার কথা আগামী ডিসেম্বরে। বড়দিন ঘিরে ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে লম্বা ছুটি থাকে। ফলে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডিসেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটা চলে যাবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। তবে এরই মধ্যে বদলে গেছে কিস্তির পরিমাণ। ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ৪৩ কোটি ডলার করে। শেষ কিস্তি নির্ধারিত হয়েছে ১০০ কোটি ডলার, যা পাওয়া যাবে ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে।

যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ মাসের শেষ দিকে আইএমএফের যে দল আসবে, তাদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা হবে। তবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া বাকিগুলো পূরণ সমস্যা নয়।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে কি পরের কিস্তি পাওয়া যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘কিস্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা তো ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে সংস্কার করছি। এর বাস্তবায়ন হওয়াটা আগে জরুরি।’