পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার আগ্রহী ক্রেতার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা অংশগ্রহণকারী আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের।
রাজধানী ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। মানুষ যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে গাছপালা, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা। এ অবস্থায় কন্ডোমিনিয়াম ধরনের উন্নত জীবনমানসমৃদ্ধ আবাসনকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন প্রকল্প বানাচ্ছে আবাসন কোম্পানিগুলো। অন্য সাধারণ প্রকল্পের চেয়ে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা থাকায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে এ ধরনের আবাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এ মেলার আয়োজক। গতকাল ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকেল থেকে মেলায় আগ্রহী ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। অংশগ্রহণকারীরা আশা করছেন, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ভিড় আরও বাড়বে।
মেলায় আবাসন কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কন্ডোমিনিয়াম ধরনের প্রকল্পে হাঁটার জায়গা, ব্যায়ামাগার, সুইমিং পুল, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জায়গা, এটিএম বুথ, নিত্যপণ্যের দোকান, ফার্মেসিসহ থাকছে বিভিন্ন আধুনিক নাগরিক সুবিধা।
আবাসনশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের কারণে মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। গ্রাহকের সাড়া পেয়ে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, মালিবাগ, গুলশান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প হাতে নিয়েছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো।
রাজধানীর নিকেতন, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ও পল্টনে পাঁচটি কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের কাজ করছে শীর্ষ আবাসন কোম্পানি আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন। এবারের মেলায় বিক্রির জন্য ৩৫টি প্রকল্প এনেছে তারা। এর মধ্যে ১৫টি আবাসিক প্রকল্পে ৩০০টির বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ও ২০টি বাণিজ্যিক প্রকল্পে পাঁচ লাখ বর্গফুটের মতো জায়গা বিক্রির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ব্যবসায় উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে গ্রাহকদের একটি বড় অংশ চান এক ভবনেই যেন সব সুবিধা থাকে। এ কারণে উন্নত জীবনযাপনের উপযোগী করে প্রকল্প নিতে হচ্ছে আমাদের।’ তবে সব শ্রেণির গ্রাহকের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছেন বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে মেলায় আবাসনের জমি বিক্রির বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেলায় প্রতিটি জমি প্রকল্পের বুকিংয়ে গ্রাহকেরা কিস্তিসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।
আবাসন কোম্পানি কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংস বর্তমানে ৪৩টি প্রকল্পের কাজ করছে। এর মধ্যে বিক্রয় ও প্রদর্শনের জন্য ২৫টি প্রকল্প মেলায় এনেছে তারা, যেগুলোতে ২০০টির বেশি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ব্যয় সাশ্রয় ও গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ প্রকল্পের পাশাপাশি এখন কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় এ ধরনের একটি প্রকল্পের কাজও শুরু করেছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) কাজী সামসুল আলম বলেন, ‘কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প নিয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ জন্য আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে বড় কোনো জায়গা পেলে সেখানে কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পই নেব। তাতে গ্রাহক ও নির্মাতা উভয়ে লাভবান হবেন।’
কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে আরেক আবাসন প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক। শ্যামলীতে ১০ বিঘা জায়গায় চার শতাধিক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হবে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এটি ছাড়াও রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৫টি প্রকল্পের কাজ চলছে। আরও অর্ধশত নতুন প্রকল্প করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ রাকিব হোসেন বলেন, ‘ঢাকার বর্তমান বাস্তবতায় ১০ কাঠার নিচে ভালো মানের প্রকল্প নেওয়া সম্ভব নয়। আবার বড় প্রকল্প নিলে সেখানে সব ধরনের নাগরিক সুবিধাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। তাই গ্রাহকের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানসম্মত পণ্য দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন আরও কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের চিন্তা করছি আমরা।’
বর্তমানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাদের প্রকল্পগুলোর গ্রাহক চাহিদা অনেক বেড়েছে এমন তথ্য দিয়ে রাকিব হোসেন বলেন, ‘গুলশান, বনানীতে যে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পাঁচ কোটি টাকা লাগবে, বসুন্ধরায় একই সুবিধার বাসা আমরা দিতে পারছি প্রায় অর্ধেক দামে। এ কারণে চাহিদা বাড়ছে।’
পুরোপুরি না হলেও কন্ডোমিনিয়ামের মতো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাসহ রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকায় দুই বিঘা জমিতে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ক্রিডেন্স হাউজিং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এ প্রকল্পকে বলছে মিনি-কন্ডোমিনিয়াম আবাসন। এখানে শিশুদের খেলার মাঠ, বাস্কেটবলের মাঠ, ব্যায়ামাগার, লন্ড্রিসহ বিভিন্ন সুবিধা রাখা হবে।
তবে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ক্রিডেন্স। এর বাইরে মেলায় আরও ৩৫টি আবাসিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে তারা। এসব প্রকল্পে ১৭৭টি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির জন্য রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকার প্রধান কিছু এলাকায় ছোট আকারের আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি আমরা। তবে এর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকের কথা বিবেচনায় নিয়ে কন্ডোমিনিয়াম প্রকল্পের পরিকল্পনা নিচ্ছি আমরা।’