Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেট কেন ব্রিফকেসে

লাল ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

বিশ্বের সব দেশের বাজেট ঘোষণার দিন সে দেশের অর্থমন্ত্রী যখন সংসদে প্রবেশ করেন, তখন তাঁর হাতে একটি জিনিস থাকবেই। সেটি হলো ব্রিফকেস। কিছুক্ষণ পর সেই ব্রিফকেস খুলে তিনি বাজেট বক্তৃতার লিখিত কপি বের করে পাঠ করেন। ফলে সবার মনেই ব্রিফকেস নিয়ে একধরনের কৌতূহল থাকে।

যুগ যুগ ধরে বিশ্বের সব দেশেই বাজেটের দিন এই দৃশ্যের বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। হাতের ব্রিফকেসে লাখ লাখ কোটি টাকা, তবে মুদ্রায় নয়, ছাপানো বক্তৃতায়। সংসদে ঢুকে সেই টাকার অঙ্কেরই বয়ান দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীদের এই ব্রিফকেসের রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানার কৌতূহল হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’-তে ব্রিফকেসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বইটি থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না, সে জন্য মানিব্যাগের জায়গায় আসে ব্রিফকেস।

বইটিতে ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেটি হলো, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। ব্রিফকেসের ভেতর থাকা বাজেটের তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার প্রয়োগ করতে পারেন। তাই সংগত কারণেই সংসদে বাজেট পেশের আগে প্রস্তাবগুলো গোপন রাখা চাই। যে অর্থমন্ত্রী বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না, তাঁর পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয় ১৮ শতক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্যে। বাজেটপ্রধানকে ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন লাল একটি স্যুটকেসে করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ বিভাগের প্রধান। তবে এই রহস্যময় ব্রিফকেসের রং সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে। তবে রং যা-ই হোক না কেন, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক ধরা হয়। আসলে বাজেট শব্দটির উৎপত্তিই যে এই ব্রিফকেসের দিকে নির্দেশ করে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরোনো ফরাসি শব্দ ‘ব্যুজেট (বোগেট)’ থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো, থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।

তবে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির বর্ণনা একটু অন্য রকম। এতে বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে—কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করার মতো।
তবে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২১ সালে ব্রিফকেসের প্রথা ভেঙে লাল মোড়কে মোড়ানো ট্যাবলেট নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন। কাগজপত্র ছাড়া ট্যাবলেট থেকে বাজেট বক্তৃতা পাঠ করেন তিনি।