রয়টার্সের প্রতিবেদন

বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদ বাড়লে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ঋণ গ্রহণের হার কমবে—এই রীতির আলোকে চলছে সুদহার বৃদ্ধির হিড়িক। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির সূচকগুলো নিম্নমুখী। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে অর্থনীতিকে। এ অবস্থায় সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের মন্দার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে এ সংকোচন প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথম। ইউরো অঞ্চলের কার্যক্রম এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম পিছিয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রসার হলেও তা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সে (পিএমআই) এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি নেতিবাচক লক্ষণ হলো, জাপান সরকার দেশীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শিগগিরই কমিয়ে আনতে যাচ্ছে। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি এখনো ম্লথ। কোভিডজনিত লকডাউন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।

ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের ইউএস কম্পোজিট পিএমআই আউটলুক ইনডেক্স জুনের ৫২ দশমিক ৩ পয়েন্টের তুলনায় চলতি মাসে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমেছে। এ হার অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়েও কম। এ নিয়ে মাসভিত্তিক হিসাবে টানা চতুর্থ মাসের মতো এ সূচক নিম্নমুখী। মূলত পরিষেবা খাতের দুর্বলতার কারণে উৎপাদন খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও সামগ্রিকভাবে তা সংকুচিত হয়েছে। পিএমআই সূচক ৫০ পয়েন্টের নিচে নামার অর্থ হলো, ওই খাতের কার্যক্রম সংকোচন এবং এর ওপরে যাওয়ার অর্থ হলো, প্রসারিত হওয়া।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের প্রধান ব্যবসায়িক অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন এক বিবৃতিতে বলেন, জুলাইয়ের প্রাথমিক পিএমআইয়ে দেখা যায়, অর্থনীতির চিত্র উদ্বেগজনক। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কোভিডজনিত লকডাউনে থাকা মাসগুলো বাদ দিলে ২০০৯ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পরে এমন হারে উৎপাদন কমার চিত্র দেখা যায়নি।

ইউরো অঞ্চলে উৎপাদন খাতে মন্দা এবং পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধিতে প্রায় স্থবিরতার কারণে চলতি মাসে সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। জরিপ অনুসারে, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ গ্রাহকদের ব্যয় কমাতে প্ররোচিত করেছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭১টি কোম্পানির ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ভিত্তিতে বলেছে, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমেই অপরিষ্কার হয়ে উঠছে। কারণ হিসেবে ইউরো অঞ্চলজুড়ে ব্যবসাগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ এবং মজুরি বৃদ্ধির সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছে।