রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা সামসুল আলম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। নতুন বছরে তাঁর ছেলে রাফিউল আলম চতুর্থ শ্রেণিতে উঠবে, আর মেয়ে মাইশা আলম প্রথমবারের মতো (প্লে শ্রেণিতে) স্কুলে ভর্তি হবে।
সামসুল আলম বলেন, ‘নতুন বছর উপলক্ষে দুজনই নতুন স্কুলব্যাগ ও জুতা কিনে দেওয়ার আবদার করেছে। শ্যামলীর একটি দোকান থেকে তাদের ব্যাগ ও জুতা কিনে দিয়েছি।’ তাঁর মতো অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের এখন এ রকম ব্যাগ ও জুতা কিনে দিচ্ছেন। ফলে বছরের শেষে স্কুলব্যাগ ও জুতার বেচাকেনা বেড়েছে। কারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে স্কুলব্যাগের বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। বিক্রেতারা জানান, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্কুলব্যাগ ও জুতা বিক্রি বাড়তে শুরু করে। জানুয়ারি থেকে খুচরা বিক্রি বাড়ে, যা চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাজারে এখন ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড—উভয় ধরনের স্কুল জুতারই ভালো চাহিদা রয়েছে। ক্রেতা আকর্ষণে বিভিন্ন কোম্পানি মূল্যছাড় দিচ্ছে।
বাজারে দেশীয় ও আমদানি করা—দুই ধরনের স্কুলব্যাগই বিক্রি হয়। আমদানি করা ব্যাগের মধ্যে চীন থেকে আসা ব্যাগের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশে স্কুলব্যাগের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার চকবাজার। ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানে এক হাজারের মতো দোকানে ব্যাগ বিক্রি হয়। স্কুলব্যাগের পাশাপাশি রয়েছে বড়দের ব্যাগ, মেয়েদের ব্যাকপ্যাক, ট্রলি ব্যাগ প্রভৃতি। চকবাজার ছাড়াও পল্টনের গাজী ভবন, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটসহ রাজধানীর আরও কয়েকটি স্থানে পাইকারিতে ব্যাগ বিক্রি হয়।
দরদাম কেমন
বিক্রেতারা জানান, চীনা ব্যাগের পাইকারি দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দেশীয় ব্যাগের দাম ১০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। দেশে ক্যাট, প্রেসিডেন্ট, আর্কটিক হান্টার, জিপ, এটিসি ফ্যালকনার, ক্ল্যাসিক প্রভৃতি ব্র্যান্ডের নামে ব্যাগ তৈরি ও বিক্রি করা হয়। ছোট শ্রেণির (আকারের) ব্যাগের দাম তুলনামূলক কম হয়। আর পাইকারির তুলনায় সাধারণত ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে খুচরায় বিক্রি হয়।
তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ব্যাগ কিছুটা কম বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেন কিছু ব্যবসায়ী। চকবাজারের মক্কা লেদারের স্বত্বাধিকারী নয়া মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর বেচাকেনা ভালো হয়নি। চলতি বছরও এখন পর্যন্ত ভালো গতি নেই।
ব্র্যান্ডের জুতায় নানা অফার
স্কুলশিক্ষার্থীদের জুতা বলতে কেডস ও শু বোঝায়। এর মধ্যে কেডসই বেশি বিক্রি হয়। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুরসহ কয়েকটি স্থানে জুতার বড় বাজার রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুল জুতার চাহিদাও অনেক। জুতা বিক্রেতারা জানান, স্কুলশিক্ষার্থীদের নন-ব্র্যান্ডের কেডস ও শুর দাম ৮০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। আর ব্র্যান্ডের জুতার দাম এক হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু উপলক্ষে স্কুল জুতায় মূল্যছাড় দিয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। যেমন দেশীয় ব্র্যান্ড অ্যাপেক্স ‘স্কুল স্মার্ট’ প্রচারণা শুরু করেছে। এর আওতায় অ্যাপেক্সের স্কুল শু বা জুতার সঙ্গে দুই জোড়া মোজা কিনলে মোজার দামে ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়া হয়।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের শাখা ব্যবস্থাপক মো. শামীম শেখ বলেন, ‘বছরের এ সময়ে স্কুল জুতা ও ব্যাগের চাহিদা বাড়ে। ইতিমধ্যে বেচাকেনা কিছুটা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এবার ভালো বিক্রি হবে।’
বিদেশি ব্র্যান্ড বাটায় চলছে ‘বাটা পায়ে স্কুল শুরু’ শীর্ষক প্রচার কার্যক্রম। এর আওতায় যেকোনো স্কুল জুতা কিনলে ১০ শতাংশ মূল্যছাড় পাওয়া যায়। আবার বে থেকে স্কুল জুতা কিনলে লটারির মাধ্যমে ২০ শিক্ষার্থী এক বছরের জন্য বৃত্তি পাবে।