অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেন খালেদা জিয়া: সালেহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক দীর্ঘকালীন ও প্রভাবশালী নেতৃত্বের প্রতীক। রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

খালেদা জিয়া ১৯৯১-৯৬ সময়ে ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ আমলে, অর্থাৎ ১৯৯৩-৯৫ সময়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক ছিলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। ১৯৯৬-২০০৫ সময়ে পল্লী–কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০০১-০৫ সময়ে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০৫ সালের মাঝামাঝিতে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পান। এই কর্মময় জীবনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া

সালেহউদ্দিন আহমেদ এখন সিঙ্গাপুর আছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় প্রথম আলোর। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া ছিলেন মৃদুভাষী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী। কোনো জটিলতা ছিল না তাঁর মধ্যে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কোনো কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করতেন না। অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেন বেগম খালেদা জিয়া। ব্যাংক খাতেও কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি গভর্নর থাকার সময় ব্যাংক খাত নিয়ে অনেকবার তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল। যুক্তি দিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি শুনেছেন। এম সাইফুর রহমান যখন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন ১৯৯১ সালে হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন। আইনটিতে অনেক দুর্বলতা ছিল, তবে আইন প্রয়োগে দুর্বলতা ছিল না। আলোচনায় বসলে বেগম খালেদা জিয়া প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করতেন, ‘আপনি কী মনে করেন?

‘২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল গভর্নরের দায়িত্ব শেষ করে চলে আসার পর বহুবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে। মনে পড়ে, কয়েক বছর আগে একবার এক ইফতার পার্টিতে তিনি আমাকে বললেন, “দেশটায় কী হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছেন?” আরেক দিন আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, “আপনার ওপর প্রচন্ড চাপ যাচ্ছে। টেলিভিশনে দেখে বুঝতে পারি।”’

খালেদা জিয়া টানা ৪১ বছর বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন, তিন বার হন প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংক খাতের কর্মীসহ সরকারি কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার কাছ থেকে উৎসাহমূলক উপদেশ পেতেন বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাঁর সময়ে কারও কোনো ভয়ের কারণ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি এককভাবে নির্দেশনা দিতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করতেন না। তিনি নির্দেশনা দিতেন আলোচনার ভিত্তিতে এবং অন্যদের মতামতের মূল্য দিতেন তিনি। কারণ, দেশ ও দেশের উন্নয়ন ছিল তাঁর মাথায়। তাঁর মতো একজন বিরল গুণের অধিকারীকে হারিয়ে আমরা শোকার্ত।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। এ ছাড়া শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, বিএনপির নেতা–কর্মী ও তাঁর অসংখ্য অনুসারীর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যেমন মানুষ মনে রেখেছে, বেগম খালেদা জিয়াও একইভাবে মানুষের মনে থাকবে।’