মেলায় অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পাশাপাশি অনেকে জমির প্রতিও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কেউ কিনতে চান এককভাবে। আর কেউ দলগতভাবে।
রাজধানীতে আবাসিক ভবনে আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার চাহিদার কমতি নেই। তাই মেলা উপলক্ষে নানা ছাড়ে এসব অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে থাকে কোম্পানিগুলো। তবে ক্রেতাদের অনেকেই শুধু একটি অ্যাপার্টমেন্ট নয়, চান পুরো বাড়িটাই। আর এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন নির্ভেজাল জমি। এবারের আবাসন মেলায় ক্রেতারা জমি কেনার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের স্টলে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান জমি বিক্রির জন্য এসেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানও ভালো সাড়া পাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ক্রেতা যাচাই-বাছাই করে মেলায় জমি বুকিং দিয়েও যাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মেলায় গতকাল দুপুরে বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে দেখা যায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুই সহকর্মী আনাস উদ্দিন ও শাহরিয়ার হোসেন। আলাপকালে তাঁরা জানান, সহকর্মীদের কয়েকজন মিলে রাজধানীর আশপাশে জমি কিনতে চান তাঁরা। আলাপকালে আনাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০ কাঠার মতো জমি কেনা। এ জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমি দেখছি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে দরদাম নিলাম। এখন নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’
মেলায় আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড জমির চারটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে মতিঝিলের কাছে গ্রিন মডেল টাউনে তাদের প্রকল্পে জমি আছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বিঘা। আশুলিয়া মডেল টাউনের ব্যাপ্তি আরও বেশি, প্রায় ৩ হাজার ৩০০ বিঘা। উত্তরা ভিউ প্রকল্পে জমি আছে প্রায় ৩৭৯ বিঘা। আর আমিন মোহাম্মদ টাউন গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এর মধ্যে দু–একটি প্রকল্পের ৮০ শতাংশ জমি গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি জমি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিন। এর মধ্যে মেলায়ও এসব জমি বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
‘পূর্বাচলে আমাদের প্রকল্পের পাশে জাইকার একটি প্রকল্প হচ্ছে। আশপাশে আরও আবাসন প্রকল্প আছে। এদিকে পূর্বাচলকে ঘিরে সরকারের যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, তাতে ভবিষ্যতে এটা গুলশান-বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’মো. রাশেদুল ইসলাম, প্রবাসী পল্লী গ্রুপের বিপণন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, আশা করছি তা শতভাগ অর্জিত হবে। ক্রেতারা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। আমরাও উন্নত সেবা দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
আবাসন মেলায় এসেছে প্রবাসী পল্লী গ্রুপও। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মেলায় পূর্বাচলে তাদের প্লট বুকিং দিলে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত জমি রয়েছে ৯ হাজার ৬০০ বিঘার মতো।
এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে এনআরবি হলিডে সিটি নামে একটি রিসোর্টও আছে। ওই রিসোর্টের ডুপ্লেক্স কটেজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। বছরে এক সপ্তাহের জন্য ওই কটেজে থাকার সুবিধা পাবেন ক্রেতা। বাকি সময় প্রবাসী পল্লী গ্রুপের তত্ত্বাবধানে চলবে এই রিসোর্ট। বছর শেষে ক্রেতাদের লভ্যাংশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রবাসী পল্লী গ্রুপের বিপণন ও বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বাচলে আমাদের প্রকল্পের পাশে জাইকার একটি প্রকল্প হচ্ছে। আশপাশে আরও আবাসন প্রকল্প আছে। এদিকে পূর্বাচলকে ঘিরে সরকারের যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, তাতে ভবিষ্যতে এটা গুলশান-বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
জমি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো জমির সঙ্গে বাড়িও বানিয়ে বিক্রি করছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি আবাসিক প্রকল্প রয়েছে। এগুলো হচ্ছে পূর্বাচল এশিয়ান টাউন, এশিয়ান ডুপ্লেক্স টাউন ও এশিয়ান টাউন শান্তি নিবাস।
‘রিহ্যাবের যেসব সদস্য জমি নিয়ে কাজ করে, তাদের থেকে প্লট কিনে কোনো অসুবিধায় পড়লে, আমরা সাংগঠনিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে থাকি।’কামাল মাহমুদ, আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি
এর মধ্যে এশিয়ান ডুপ্লেক্স টাউন গড়ে উঠেছে পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজ থেকে চার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। সেখানে বাড়ি কিনলে পাঁচ কাঠা জমির মালিক হওয়া যাবে। বাড়িটি হবে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুটের মধ্যে। থাকবে বাগান, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানা সুবিধা। ২৩৭ বিঘা জমির এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে ৩৭টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মেশকাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে একেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ির দাম রাখা হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার মধ্যে। এখানে সব নাগরিক সুবিধাসহ নিরিবিলি পরিবেশে নিরাপদে থাকা যাবে।’
আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিহ্যাবের যেসব সদস্য জমি নিয়ে কাজ করে, তাদের থেকে প্লট কিনে কোনো অসুবিধায় পড়লে, আমরা সাংগঠনিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে থাকি।’