রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ সোমবার ‘দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয়’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ সোমবার ‘দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয়’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়

জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে, আশা সরকারের

আগামী বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে মূল্যস্ফীতি কমার আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলক যে এত দিন ভারসাম্যহীন ছিল, তা এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ সোমবার ‘দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয়’ নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এসব কথা ওঠে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব সাইফুল্লাহ পান্না, প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি মজুরি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক খাত, বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি, ঋণপত্র ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়।

মূল্যস্ফীতি কমেছে, মজুরি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের জুনের পর ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি গত মাসে (নভেম্বর) ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি। ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের পার্থক্য অনেকটাই কমেছে। গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) ছিল ৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

রিজার্ভ বেড়েছে

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০২৪ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক ছিল। আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে তা কমে প্রায় ১৪ কোটি ডলার ঋণাত্মকে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এটি আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪৯ লাখ ডলার ঋণাত্মক।

কৃষি উৎপাদন ভালো হয়েছে

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আমন ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে তা সম্ভব হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ধানের মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

প্রবাসী আয় ও আমদানি বেড়েছে

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ১৩ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ ঋণাত্মক। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

এলসি খোলা বেড়েছে

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণাত্মক। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ।