ছুটির দিনে সাড়া বেশি

বাণিজ্যিক প্রকল্পেও আধুনিক সুবিধা

গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার তৃতীয় দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল অন্য দুই দিনের তুলনায় বেশি।  

ইস্টার্ন হাউজিংয়ের স্টলে পছন্দের প্লট-ফ্ল্যাট খুঁজছেন ক্রেতারা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে আবাসিক ভবনের পাশাপাশি বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে এখন শুধু জায়গা পেলেই খুশি না বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানিগুলো। জায়গাকে যেন কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও চায় তারা।

এ কারণে গ্রাহকের চাহিদার কথাটি মাথায় রেখে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাণিজ্যিক প্রকল্পের প্রতি আবাসন প্রতিষ্ঠানের আগ্রহও বাড়ছে। তাতে আধুনিক বাণিজ্যিক প্রকল্পের সংখ্যাও বাড়ছে। এসব বাণিজ্যিক প্রকল্পে অফিস স্পেস ছাড়াও থাকছে ক্লাব হাউস, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল ও সেলুনের মতো বিভিন্ন আধুনিক সুবিধা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা ঘুরে ও বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এ মেলার আয়োজন করেছে। গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার তৃতীয় দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল অন্য দুই দিনের তুলনায় বেশি।

র‌্যাংসের একটি প্রকল্পের খোঁজখবর করছেন এক জন নারী। গুলশানে ২৭ তলা বাণিজ্যিক প্রকল্প তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি

আগ্রহী ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির স্টল ঘুরে নিজেদের পছন্দের আবাসনের খোঁজখবর নিয়েছেন। আগত দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি খোঁজ করেছেন ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের।  

নকশায় গুরুত্ব দেয় র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ

রাজধানীর গুলশান দক্ষিণ অ্যাভিনিউতে প্রায় সাড়ে ১৮ কাঠা জায়গায় আরকে স্কয়ার নামে একটি বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার প্রকল্প করছে র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ লিমিটেড। পাঁচটি বেজমেন্টসহ ২৭ তলা এই ভবনে বাণিজ্যিক জায়গা ছাড়াও ক্লাব হাউস, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুলসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যস্ত এ নগরীতে যে কেউ কর্মক্ষেত্রেও যেন এসব সুবিধা পান, সে জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

এবারের মেলায় ৩৫টি বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রকল্প নিয়ে অংশ নিয়েছে র‌্যাংগ্‌স প্রপার্টিজ। এর মধ্যে ৯টি বাণিজ্যিক প্রকল্প। বাকিগুলো আবাসিক। মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা প্রণয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয় র‌্যাংগ্‌স। গ্রাহকেরা যাতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ভবনের জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই ভবনের নকশা করা হয়।

এর পাশাপাশি ভবনে সবুজের আধিক্য বাড়াতে দ্বিতল ও ত্রিতল উচ্চতাবিশিষ্ট বারান্দা, ছাদে ‘ডাবল স্ল্যাব’ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। এ কারণে ভবনের ছাদে কিংবা বারান্দায় অধিক উচ্চতার গাছ বেড়ে উঠতে পারে।

ফ্ল্যাট প্রকল্পের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে কনকর্ড। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে পছন্দের আবাসন খুঁজছেন ক্রেতারা

কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট

রাজধানী ঢাকায় পাঁচটি ও চট্টগ্রামে দুটি বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার প্রকল্প নিয়ে রিহ্যাব আয়োজিত এবারের আবাসন মেলায় অংশ নিয়েছে কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। এ ছাড়া ৯টি আবাসিক প্রকল্পও প্রদর্শন করা হচ্ছে মেলায় তাদের স্টলে। এসব আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে একটি কনডোমিনিয়াম ধরনের।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা আবাসিক প্রকল্পের পাশাপাশি বৃহৎ বাণিজ্যিক স্পেসের প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় আয়তনের জায়গার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে অগ্নিনিরাপত্তা, পার্কিং ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করছে তারা। ঢাকায় কনকর্ডের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট থেকে ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের বাণিজ্যিক জায়গার প্রকল্প আছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আরিফ হোসাইন বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো একাধিক ছোট ফ্লোরের পরিবর্তে বড় একটি ফ্লোর চায়। এতে তাদের ব্যবস্থাপনা খরচ অনেক কমে যায় এবং যোগাযোগ সহজ হয়।

মেলায় ৬০ প্রকল্প প্রদর্শন করছে ডোম-ইনো। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে পছন্দের অ্যাপার্টমেন্ট দেখছেন কয়েকজন দর্শনার্থী

মেলায় ডোম-ইনোর ৬০ প্রকল্প

এবারের মেলায় ৬০টি প্রকল্প বিক্রয় ও প্রদর্শন করছে ডোম-ইনো বিল্ডার্স। তার মধ্যে ৫৭টি আবাসিক ও ৩টি বাণিজ্যিক জায়গার প্রকল্প। এসব প্রকল্পে প্রায় পাঁচ শতাধিক অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয়ের উপযোগী। ডোম-ইনো বিল্ডার্স জানিয়েছে, রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, শান্তিনগর, আরামবাগ, পল্টন, রাজারবাগ, উত্তরা ও মিরপুরে তাদের প্রকল্পগুলো অবস্থিত। মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত—এই তিন শ্রেণির ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আনিসুজ্জামান স্বপন বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের আবাসন খাতের বাজার কিছুটা মন্থর। বর্তমানে যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে, সেখানে ১০-২০ শতাংশ দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। তবে এই মেলা এ খাতের বিদ্যমান অবস্থাকে কিছুটা হলেও চাঙা করেছে।

ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড

দেশের প্রথম আবাসন কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ইস্টার্ন হাউজিং এবারের মেলায় সাতটি আবাসিক প্রকল্পের ৪২৬টি অ্যাপার্টমেন্ট প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মেলায় তারা সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে এসেছে। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি কনডোমিনিয়াম।

প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান বলেন, ৫৭ বছর ধরে নিয়ম মেনে কাজ করার পাশাপাশি বিক্রয়–পরবর্তী সেবাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় ইস্টার্ন হাউজিং।

তবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ জানিয়েছেন ফরহাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘যে ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, সেগুলোর দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে নতুন প্রকল্পগুলোর দাম অনেক বেড়েছে। এরপরও যতটা সম্ভব দামকে গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি।’