
বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর গত ১০-১২ বছরের বিনিয়োগ পানিতে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির সভাপতি আবদুল মুক্তাদির।
আবদুল মুক্তাদির বলেছেন, ‘কোনো ওষুধ রপ্তানি করতে হলে ৩-৪ বছর সময় লাগে। খুবই ব্যয়বহুল, ১-২ মিলিয়ন ডলার লাগে। যুক্তরাষ্ট্র ওষুধের সবচেয়ে বড় বাজার। যদিও আমাদের ওষুধ রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হিস্যা কম। দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে যোগ্যতা অর্জনের জন্য ১০ বছর ধরে কাজ করছি। ইতিমধ্যে ১০-১২টি কোম্পানি সেই সক্ষমতা অর্জনে করেছে। তবে সমস্যাও আছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা তিন বছর ধরে আমাদের কারখানার পরিদর্শনে আমাদের দেশে আসে না। অথচ আমরা টাকা জমা দিয়ে বসে আছি। এ রকম শুল্কের বাইরে অশুল্ক বাধাও রয়েছে।’
আবদুল মুক্তাদির আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে যদি বাড়তি ৩৫ শতাংশ দিতে হয় এবং অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের শুল্ক ১০-১৫ শতাংশ হয়; তাহলে গত ১০-১২ বছর আমরা যে বিনিয়োগ করলাম, সেটা পানিতে যাবে। একেকটা ওষুধ কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য ৫০-১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, এটা মাঠে মারা যাবে।’
আজ রোববার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মুক্তাদির। প্রথম আলো রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ গোলটেবিলের আয়োজন করেছে। সেখানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।
ওষুধশিল্প সমিতির সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির আলোচনায় কিছু শর্ত আসছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ওষুধ শর্তহীনভাবে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে দিতে হবে। এটা ভয়ংকর শর্ত। এমনটি হলে ওষুধশিল্পে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমরা যাঁরা ব্যবসাটির সঙ্গে যুক্ত তাঁরা বিষয়টি ভালো বুঝবেন। তাই কোনো কিছু মেনে নেওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে নিলে ভালো হয়। যাতে আমরা বড় কোনো ঝামেলায় না পড়ে যাই।
আবদুল মুক্তাদির আরও বলেন, ‘বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রিপস চুক্তির কারণে আমাদের দেশের ওষুধশিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই একটি কলমের খোঁচায় যেন আইনকানুন ওলটপালট না হয়ে যায়। যাঁরা দর-কষাকষিতে যাবেন, তাঁরা সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। তাই এমন সাধারণ শর্ত কিংবা শিথিলতা থাকা উচিত যে কোনো কিছু আমাদের দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে আমাদের দেশেই আইন প্রযোজ্য হবে। সেটা যদি আপনারা না মানেন, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করব। এখানে আমরা যেন একটা জিনিস সই করতে গিয়ে পানিতে পড়ে না যাই, ভীষণ বিপদে না পড়ে যাই, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।’