Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতীয়দের দ্বিগুণ দামে চিনি খাচ্ছে বাংলাদেশিরা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন ভোক্তা যে চিনি কিনতে পারছেন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ টাকা কেজি দরে, বাংলাদেশি ভোক্তারা একই মানের চিনি কিনে খাচ্ছেন তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে। তার একটি প্রমাণ উঠে এসেছে আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকেও।

সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ভারতের কলকাতা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি আমদানি করছে সরকার। এক টনে এক হাজার কেজি হিসেবে মোট চিনির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ২৫ লাখ কেজি। এ চিনি কিনতে খরচ হবে ৭০ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনি কিনতে খরচ হবে ৫৬ টাকা ২২ পয়সা।

কলকাতার শ্রীনোভা ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এ চিনি কেনা হবে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া, অর্থাৎ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম)। ক্রয় কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে আজ। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

অর্থমন্ত্রী ব্রিফিংয়ে ছিলেন না। আর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র বাদ দিয়ে কেন ডিপিএমে চিনি আমদানি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি সাঈদ মাহবুব খান।
দুই মাস আগে গত ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে ব্রাজিল থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল টিসিবির জন্যই। ওই চিনির জন্য খরচ হয়েছিল ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৬২৫ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম দেখানো আছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে এক বছর আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশের বেশি।

চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫৬ টাকা দরে যে চিনি আমদানি করা হচ্ছে—নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ভ্যাট, জাহাজভাড়া ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে প্রতি টন ৯৬ হাজার টাকা পড়বে, যা প্রতি কেজিতে পড়বে ৯৬ টাকা। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, তারা যেন চিনির শুল্ক তুলে নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়।’

প্রতি কেজিতে খরচের কথা জানতে চাইলে আজ অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান প্রতি টন চিনির দাম আরও দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার টাকার কথা উল্লেখ করেন। দুই দেশের দামের এত ব্যবধান নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের নাগরিকদের তুলনায় দ্বিগুণ দামে চিনি কিনে খেতে হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিকদের—উভয় দেশের জন্যই আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম সমান—এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম রহমান বলেন, ‘ভারত চিনিতে প্রণোদনা দিয়ে থাকতে পারে।’
কারওয়ান বাজারে আজ বিকেলে বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি কলেজের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশি চিনি পরিশোধন কারখানাগুলো মুনাফা বেশি করছে। এ বিষয়ে সরকারের তদারকি নেই। কয়েকটি পরিশোধন কারখানার হাতে চিনির বাজার জিম্মি। ফলে আমাদের মতো অসহায় ভোক্তাদের বেশি দামে চিনি কিনে খেতে হচ্ছে।’

দেশবন্ধু, আবদুল মোনেম, এস আলম, মেঘনা, সিটি—এসব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোই দেশের প্রধান চিনি সরবরাহকারী।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এ চিনির প্রায় পুরোটা বিদেশ থেকে আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। এর বাইরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) উৎপাদন করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন চিনি।

প্রতিবেশী দুই দেশে ভোক্তাদের দিক থেকে চিনির মতো একটি পণ্যের দামের ব্যবধান এত বেশি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারত নিজেরা উৎপাদন করে, এটা একটা কারণ হতে পারে।

আর আমাদের প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এতে কেজিতে ৩০ টাকারও বেশি ভ্যাট-শুল্ক দিতে হয় সরকারকে। আবার আমাদের ব্যবসায়ীরা মুনাফা বেশি করেন, সেই অভিযোগও আছে।’ শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।