আয়কর রিটার্ন দেওয়ার মৌসুম চলছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর রিটার্ন দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। সময় বাড়তে পারে এক মাস। কিন্তু রিটার্নের দেওয়া সময় যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি হয়, তা হলো রিটার্নে নগদ টাকা কত দেখানো উচিত?
উত্তর হলো আপনার কাছে যা নগদ আছে, তা–ই দেখানো উচিত। একটু কমবেশি হলে তেমন একটা ক্ষতি নেই। তবে অস্বাভাবিক বেশি নগদ টাকা দেখানো নিরাপদ নয়। ভবিষ্যতে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন।
নগদ টাকা কত দেখাবেন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর রিটার্নে দেওয়া তথ্য যেমন সম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে ৩০ জুন তারিখের ব্যালান্স বা স্থিতি দেখাতে হয়। তাই ৩০ জুন একজন করদাতার হাতে নগদ টাকা যা আছে, তা–ই লিখতে হবে।
আয়কর নথিতে নগদ কত দেখাবেন, এটি নির্ভর করে আয় ও জীবনযাত্রার ওপরে। সাধারণত পকেটে বা সংসার খরচ করার জন্য বাসায় সাধারণত নগদ টাকা হাতে রাখা হয়। বছর শেষে নগদ টাকাও থেকে যায়, সেটাই আয়কর রিটার্নে দেখানোর নিয়ম।
এখন আমরা সবাই কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ব্যবহার করি। এ ছাড়া বিকাশ, নগদের মতো মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) নিয়ে থাকি। তাই আমাদের নগদের খুব বেশি দরকার পড়ে না। যদি কোনো সময় নগদ টাকার পরিমাণ দরকার পড়ে তাহলে কার্ড দিয়ে বুথ থেকে তুলে নিই।
তবে কোনো কোনো করদাতার ক্ষেত্রে নগদ টাকার পরিমাণ বেশি থাকতে পারে। যেমন যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁদের কাছে নগদ টাকা বেশি থাকতে পারে। এ রকম ব্যতিক্রম ছাড়া এখন করদাতাদের হাতে নগদ টাকা খুব বেশি থাকে না।
অনেকে লাখ লাখ টাকা কিংবা অনেকে কোটি টাকাও দেখান। তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ হলো তাঁদের কোনো না কোনো সময় অডিট বা নিরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তখন এই টাকার উৎস কোথায় দেখাবেন?
কর নথিতে একবার অস্বাভাবিক কিছু বা যা সঠিক নয় দেখাবেন, তারপর থেকে কিন্তু প্রতিবছর আপনাকে এই জের টানতে হবে এবং এই জের আপনি সহজে বন্ধ করতে পারবেন না। আপনাকে বহু বছর এই ঝামেলা বয়ে বেড়াতে হবে।
কেন বেশি দেখান
আইনের ফাঁকফোকরের কারণেও অনেকে রিটার্নে নগদ টাকা বেশি দেখান। কারণ, ভবিষ্যতে যাতে বৈধ টাকা দেখাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য এমন করেন।
একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনেরা অনেকটা সমবায়ের মতো করে টাকা জমান। এর কোনো দলিলাদি নেই, অনেকটা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের মধ্যে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে টাকা রাখেন।
কিন্তু রিটার্নে সেই সঞ্চয়ের হিসাব দেখানো যায় না। কিছুদিন পর হয়তো একটি জমি কেনেন তাঁরা। যখন সম্পদ হিসাবে জমি রিটার্নে দেখান, তখন আয়ের উৎস দেখাতে হয়। তখন ক্যাশ ইন হ্যান্ড বা নগদ টাকা রিটার্নে দেখানো থাকলে তা সহজেই জমির বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো যায়।
ব্যাংক হিসাবের টাকা
ব্যাংক হিসাবের টাকা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হলে একটি নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। আপনার ব্যাংক হিসাবের বিবরণীতে ৩০ জুন তারিখে যা স্থিতি থাকবে, আয়কর রিটার্নে আপনি সেটাই দেখাবেন। আপনার একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলে প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের ৩০ জুনের স্থিতি আলাদা করে দেখাতে হবে।
অনেকেই নিজের ব্যাংক হিসাবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের টাকা জমা রাখেন ও উত্তোলন করেন। যা ভবিষ্যতে বড় জটিলতায় ফেলতে পারে। তাই ব্যাংক হিসাবে শুধু নিজের অর্জিত টাকাই লেনদেন করা উচিত।