
রাজধানীতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী চতুর্থ নগর কৃষি মেলা। এক হাজারের বেশি প্রজাতির গাছ নিয়ে মেলায় ৫০টির বেশি নার্সারি ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এবারের মেলায় মূল আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। তার মধ্যে ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ বাগানবিলাস নিয়ে। একেকটি বাগানবিলাসগাছ মিলছে ১০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায়।
এ ছাড়া নগর কৃষি মেলায় আরও রয়েছে অর্কিড, ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, অ্যাডেনিয়াম, অ্যাগলোনিমা, অ্যান্থুরিয়াম, বনসাই, স্প্যানিশ মস, এয়ার প্ল্যান্ট ও গোলাপসহ এক হাজারের বেশি ধরনের গাছ। এসব গাছের দাম ৩০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গত রোববার এই নগর কৃষি মেলা শুরু হয়েছে। মেলার আয়োজন করেছে নগর কৃষি ফাউন্ডেশন। সব মিলিয়ে মেলায় ৬৫টি স্টল রয়েছে।
আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলায় ফুলের প্রাধান্য বেশি। শুধু সাকুলেন্ট ধরনের গাছের পাঁচ শর বেশি প্রজাতি রয়েছে। আরও আছে কয়েক শ প্রজাতির অর্কিড। গত বছর মেলায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি হয়েছিল।
মেলায় গাছের বাহার
১৫০ ধরনের বাগানবিলাস নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে নগর কৃষি নার্সারি। পিংক প্যাচ, লেডি হাডসন, বিএফ রুবি, গ্ল্যাবরা পারপল, গোল্ডেন সানশাইন, স্প্ল্যাশ ও সিলভার লিফ ডিলাইটসহ বিভিন্ন ধরনের বাগানবিলাস রয়েছে এই নার্সারির স্টলে। নগর কৃষি নার্সারির স্বত্বাধিকারী রিফাত কাউসার বলেন, তাদের বাগানবিলাসগাছ পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
নগর কৃষি মেলায় ৬০ প্রজাতির গাছ নিয়ে অংশ নিয়েছে ফয়সাল নার্সারি। আমদানি করা ট্রপিক্যাল ক্লেমাটিস ও বারমাসি ক্যামেলিয়াও এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া এজেলিয়া, মাল্টি ক্রাফ্টেড বাগানবিলাস, অ্যাডেনিয়ামসহ আরও কয়েক প্রজাতির গাছও এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফয়সাল নার্সারির স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আহমেদ বলেন, স্টলে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অর্কিড রয়েছে। এ ছাড়া মেন্টা গোলাপ, গ্যালাক্সি গ্লো, ডাবল ডিলাইট, টপ সিক্রেট ও ব্লাসসহ প্রায় ২০ ধরনের গোলাপ রয়েছে। এসব গোলাপগাছের দাম ৩০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা।
মেলায় প্রায় ৪০০ ধরনের সাকুলেন্ট ও ক্যাকটাস গাছ নিয়ে অংশ নিয়ে আরেক প্রতিষ্ঠান রাঙ্গোলি। মূলত ফায়ার স্ট্রম, শাপলা, গোস্ট ট্রি, পারপল ডিলাইট ও পার্লে ভন ন্যুর্নবার্গসহ দুই শর বেশি প্রজাতির সাকুলেন্ট রয়েছে রাঙ্গোলির স্টলে।
রাঙ্গোলির স্বত্বাধিকারী ইয়াসমিন খান বলেন, সাকুলেন্ট ধরনের গাছ মরুভূমিতে জন্মায়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশেও এই গাছের চাহিদা বেড়েছে। এ ধরনের গাছে পাতায় পানি থাকে বলে খুব একটা পানি দিতে হয় না। তাই বাসার ভেতরে এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে। এসব সাকুলেন্টের দাম আট হাজার টাকা পর্যন্ত।
আমদানি করা প্রায় ২০ ধরনের বেশি অর্কিড, অ্যাডেনিয়াম ও অ্যান্থুরিয়াম ধরনের গাছ নিয়ে মেলায় এসেছে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের অর্কিড পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। আর এয়ার প্ল্যান্টের দাম ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।
মেলায় পাঁচ ধরনের বনসাই গাছ নিয়ে অংশ নিয়েছে প্রজন্ম বনসাই অ্যান্ড আর্ট একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটি ফাইকাস, টাইগার বার্গ ফাইকাস ও প্রেমনা ধরনের বনসাইয়ের দাম চাচ্ছে ২ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা।
কাচের বোতলে গাছ
মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে টেরারিয়াম। টেরারিয়াম হলো কাচের তৈরি একটি স্বচ্ছ পাত্রে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র উদ্ভিদজগৎ। সাধারণত ছোট গাছ, মস, পাথর ও মাটির সমন্বয়ে টেরারিয়াম তৈরি করা হয়। বন্ধ কাচের ভেতরে পানি বাষ্প হয়ে আবার মাটিতে ফিরে আসে। এর মাধ্যমে একটি ছোট্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়।
দুই বছর ধরে টেরারিয়াম তৈরি করছে গার্ডেন গ্রিনের স্বত্বাধিকারী এস কে হাসান শরিফ। মেলায় কয়েক প্রজাতির গাছ দিয়ে তৈরি টেরারিয়াম নিয়ে অংশ নিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। এস কে হাসান শরিফ বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির মস ও ফিটোনিয়া দিয়ে এই টেরারিয়াম তৈরি করেছি। এসব টেরারিয়ামের দাম ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা।
আয়োজকেরা জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেলা চলবে। সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এই মেলা উন্মুক্ত থাকবে।