
বিশ্ববাজারে টানা তিন সপ্তাহ ধরে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। পণ্যটির দাম বেড়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা আগামী বছরের শেষ নাগাদ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
সেই সঙ্গে গত এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬২ সেন্ট বা দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৭০ দশমিক ৯১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ দাম।
অন্যদিকে ইউরোপের বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম গত সপ্তাহে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭২ দশমিক ৬৯ ডলারে উঠেছে। ২০১৯ সালের মে মাসের পর যা সর্বোচ্চ। এ নিয়ে গেল সপ্তাহে তিন দফায় ব্রেন্টের দাম মোট ১ শতাংশ বেড়েছে।
এ দিকে আইইএ বৈশ্বিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা নিয়ে নতুন পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, জ্বালানি তেলের চাহিদা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার আগের অবস্থায় ফিরতে পারে।
আইইএ তাদের জুন মাসের প্রতিবেদনে আরও বলেছে, চলতি ২০২১ সালেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা মোটামুটি বাড়বে। তবে আগামী বছরই বৃদ্ধির গতি জোরদার হবে। তত দিনে উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (ওপেক প্লাসের) তেল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ওই সময়ে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা বেড়ে ১০ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হবে।
আইইএর বাজার বিশ্লেষক লুইস ডিকসন তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য ও তাদের মিত্রদের তেল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে জ্বালানি তেলের দাম অবশ্যই বাড়বে।
২০২০ সালে দৈনিক চাহিদা ৮৬ লাখ ব্যারেল কমে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে আইইএ জানায়, আগামী মাস থেকে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ১৪ লাখ ব্যারেল বাড়বে। এই প্রবণতা চলবে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত। চলতি বছর জ্বালানির দৈনিক চাহিদা ৫৪ লাখ ব্যারেল বাড়বে এবং আগামী বছরে তা আরও ৩১ লাখ ব্যারেল বৃদ্ধি পাবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফেরায় এই বাড়তি চাহিদার সৃষ্টি হবে।
তবে তেলের চাহিদা বাড়লেও বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পথে এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে মনে করে আইইএ। এ বিষয়ে তারা বলছে, মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্লথগতির কারণে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ভুক্ত দেশগুলোর বাইরের অর্থনীতিগুলো ঝুঁকির মুখে আছে।
এ মাসের গোড়ার দিকে ওপেকও জানিয়েছিল যে তার সদস্যদেশগুলো জুলাই থেকে ধীরে ধীরে তেল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়াবে। এ বিষয়ে আগামী ১ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওপেকের পরবর্তী বৈঠক থেকে নতুন ঘোষণা আসতে পারে।
সূত্র: মার্কেটওয়াচ