চীনের বিরল খনিজ চৌম্বক কেনা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত জুন মাসে আগের মাসের তুলনায় সাত গুণের বেশি বেড়েছে এই রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে লিপ্ত, তখন চীন থেকে তাদের বিরল খনিজ ধাতু আমদানি বৃদ্ধি কৌতূহলের জন্ম দেয়।
রোববার চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের এই বিরল খনিজ রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ মেট্রিক টনে, যা মে মাসের তুলনায় ৬৬০ শতাংশ বেশি। জুন মাসে উভয় দেশের মধ্যে বিরল খনিজ ও চৌম্বক পদার্থ জটিলতা নিরসনের চুক্তি হওয়ার পরপরই এই রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা আবারও চীনের কাছে এইচ২০ এআই চিপের বিক্রি শুরু করবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও বায়ুচালিত টারবাইনের মতো খাতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ বৃদ্ধি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সমঝোতার ইঙ্গিতবহ ঘটনা। অর্থাৎ তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার ইঙ্গিত।
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে শক্তিশালী চিপ। এ চিপের মেমোরি বা প্রসেসরের প্রত্যক্ষ অংশ না হলেও পার্শ্ববর্তী যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তিতে এসব বিরল মৌল খনিজ ধাতুর ব্যবহার আছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিরল মৌল খনিজ ধাতু অপরিহার্য। সে কারণে এই মহার্ঘ বস্তুটির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নজর বারবরই। চীনের কাছে আধুনিক চিপ বিক্রির শর্ত হিসেবে তারা এই বিরল খনিজের বিষয়টি যুক্ত করেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, সেখানেও বিরল খনিজের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অর্থাৎ এই খনিজের গুরুত্ব আছে।
এ ছাড়া স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, বায়ু টারবাইনের মতো আধুনিক যন্ত্রেও এসব উপাদান ব্যবহৃত হয়। এই বিরল খনিজ চৌম্বক পদার্থ দিয়ে আজকের ব্যবহৃত প্রযুক্তির অনেকখানি অচল হয়ে পড়ত। নিওডিমিয়াম ও স্যামারিয়ামের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি এই চুম্বক এতটাই শক্তিশালী যে এগুলো ছাড়া ইলেকট্রিক মোটর, ড্রোন, স্মার্টফোন, এমনকি এমআরআই যন্ত্র চালানো কঠিন হয়ে পড়ত।
বিশ্বে বিরল খনিজ চৌম্বক পদার্থের ৯০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে চীন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এসব বিরল খনিজ ধাতু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন।
ফলে এপ্রিল ও মে মাসে চীনের এসব পণ্যের রপ্তানি নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয় এবং কিছু গাড়ি কোম্পানি উৎপাদন আংশিক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
মোট হিসেবে জুন মাসে চীন বিশ্ববাজারে ৩ হাজার ১৮৮ টন বিরল ধাতু ও চৌম্বক পদার্থ রপ্তানি করেছে। মে মাসে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৩৮ টন। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ১৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় এই পরিমাণ এখনো ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকদের মতে, জুন মাসে আরও বেশি রপ্তানিকারক লাইসেন্স পাওয়ায় জুলাই মাসে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে চীনের বিরল খনিজ চৌম্বক রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ২২ হাজার ৩১৯ টনে নেমেছে।
দেখে নেওয়া যাক, গত জুন মাসে কোন দেশ চীনের কাছ থেকে কী পরিমাণ খনিজ কিনেছে। জুন মাসে সবেচেয়ে বেশি কিনেছে জার্মানি; তারা কিনেছে মোট ৭৬৪ মেট্রিক টন। যুক্তরাষ্ট্র কিনেছে ৩৫৩ মেট্রিক টন। ভিয়েতনাম কিনেছে ৩৪০ টন; দক্ষিণ কোরিয়া কিনেছে ২৮০ মেট্রিক টন; থাইল্যান্ড কিনেছে ২০৫ মেট্রিক টন; ভারত কিনেছে ১৭২ মেট্রিক টন; পোল্যান্ড কিনেছে ১৫৯ মেট্রিক টন; জাপান কিনেছে ১৩২ মেট্রিক টন; ফ্রান্স কিনেছে ১০৫ মেট্রিক টন ও হাঙ্গেরি কিনেছে ১০৩ মেট্রিক টন।
এই বিরল খনিজ চৌম্বক ব্যবহার শুধু প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কথা বলে না; বরং এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ভবিষ্যতের শক্তি, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা প্রযুক্তির ভিত্তি কার হাতে থাকবে।