বিশ্বের কোন ১০ কোম্পানিতে সবচেয়ে বেশি কর্মী কাজ করেন

আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আয়তন ও পরিসর বিশাল। একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করেন কারখানায়। সেবা প্রতিষ্ঠানেও বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। যদিও এখন প্রযুক্তির উত্থানের কল্যাণে কর্মী সংখ্যা কমে আসছে।

যন্ত্রের উন্নতির কারণে কারখানায় মানুষের প্রয়োজনীয়তা কমছে ঠিক, কিন্তু তার মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কারখানা ও সেবা প্রতিষ্ঠানে যত মানুষ একসঙ্গে কাজ করেন, সেই সংখ্যা চমকে দেওয়ার মতো। আবার এত দিন মূলত উৎপাদনশীল কারখানায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করতেন। তার সঙ্গে এখন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সেটা হলো সেবা খাতের বিকাশ। সারা পৃথিবীতেই ই-কমার্স খাতের এখন বাড়বাড়ন্ত। এই খাতে অনেক বড় বড় কোম্পানি গড়ে উঠেছে। তাদের কাজের পরিসর সারা পৃথিবীতেই বিস্তৃত। এসব প্রতিষ্ঠানেও বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করছেন।

দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের কোন প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করেন। সূত্র কোম্পানিসমার্কেটক্যাপ ডট কম।

ওয়ালমার্ট, কর্মী: ২১ লাখ, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের খুচরা ব্যবসা জগতের মহিরুহ প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের স্যাম ওয়ালটন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে এই কোম্পানির উত্থান অব্যাহত আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক হাজারের মতো দোকান আছে ওয়ালমার্টের। সেই সঙ্গে আছে সুপার সেন্টার ও ছাড়ের দোকান। ওয়ালমার্টের কৌশল হলো দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কমদামি পণ্য বিক্রি করা। পণ্যের বিপুল সমাহার আছে তাদের। ফলে সেই ভিড় সামলাতে তাদের লোকবলও লাগে অনেক। এই বিপুল পরিমাণ পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে সরবরাহব্যবস্থাও তাদের অনেক শক্তিশালী।

অ্যামাজান, কর্মী: ১৫ লাখ ৪৬ হাজার, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

ওয়ালমার্টের মতো অ্যামাজনও খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। আজ পৃথিবীতে যে ই-কমার্সের বাড়বাড়ন্ত, তার পথ দেখিয়েছে অ্যামাজন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অ্যামাজন অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী। ১৯৯৪ সালে মূলত অনলাইনে বই বিক্রি দিয়ে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। এখন এমন কোনো জিনিস নেই, যা অ্যামাজনে পাওয়া যায় না বললেই চলে। ই-কমার্সের পাশাপাশি ক্লাউড কম্পিউটিং, এআইসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে অ্যামাজন। এ ছাড়া হোল ফুড ও আইএমডিবির মতো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে অ্যামাজনের।

বিওয়াইডি, কর্মী: ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০, দেশ: চীন

বিশ্বের গাড়িশিল্পে এখন নতুন বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যয় ও পরিবেশদূষণের মতো প্রভাবের কারণে দূষণবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে এগোচ্ছে সারা বিশ্ব। এই খাতের নেতৃত্বে ছিল ইলন মাস্কের টেসলা। এখন সেই জায়গা অনেকটাই ধরে ফেলেছে চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি। মূলত টেসলার চেয়ে অনেক কম দামে গাড়ি বাজারে আনায় তারা দ্রুত বাজার ধরে ফেলছে। এমনকি কোনো কোনো সময় টেসলার চেয়ে বিওয়াইডির বিক্রি হচ্ছে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এত বিপুল বিক্রি সামাল দিতে তাদের কর্মীও লাগে অনেক।

জিংডং মল (জেডি), কর্মী: ৯ লাখ, দেশ: চীন

কর্মীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ কোম্পানি জেডি ডট কম। এটিও ই-কমার্স কোম্পানি—বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য এই কোম্পানি বিশেষভাবে খ্যাত। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে পণ্য সরবরাহে তাদের গতি আছে। জেডির সরবরাহব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আছে। কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানির সূচক নাসডাকের অন্তর্ভুক্ত। বৈশ্বিক খুচরা বিক্রয় খাতে এই কোম্পানির যথেষ্ট প্রভাব আছে। সেই সঙ্গে তাদের প্রবৃদ্ধিও ভালো।

ফক্সকন, কর্মী: ৮ লাখ ২৬ হাজার ৬০৮, দেশ: তাইওয়ান

তাইওয়ানের এই কোম্পানি হলো ইলেকট্রনিকস কোম্পানি। অর্থাৎ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির পণ্য উৎপাদন করে তারা। এশিয়ার বাজারের জন্য আইফোনও উৎপাদন করেছে তারা। সেই সঙ্গে এআই সার্ভার, স্মার্ট ভোক্তা ইলেকট্রনিকস পণ্য ও বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে তারা অগ্রগামী। সেমিকন্ডাক্টর খাতেও তারা এগিয়ে এসেছে। ফলে বিশ্বের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে ফক্সকন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ২৩০টি জায়গায় তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

অ্যাক্সেনচিউর, কর্মী: ৭ লাখ ৯১ হাজার, দেশ: আয়ারল্যান্ড

এটি মূলত সেবা দানকারী কোম্পানি। বিশ্বের ১২০টি দেশে ৯ হাজার বেশি গ্রাহক আছে এই কোম্পানির। তারা মূলত ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে কাজ করে। সেই সঙ্গে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার নিরাপত্তা ও পরামর্শক সেবা দেয় তারা। মূলত বিভিন্ন কোম্পানির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে এই সেবা দিয়ে থাকে তারা।

ফক্সভাগেন, কর্মী: ৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৩৪, দেশ: জার্মানি

১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত জার্মানির শ্রমিকদের উদ্যোগে গঠিত। মূলত মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়ি পৌঁছে দিতে এই কোম্পানির উদ্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই কোম্পানির উত্থান ত্বরান্বিত হয়। পরবর্তীকালে আউডি (অডি), পোরশে, বেন্টলি ও ল্যাম্বারগিনির মতো ব্র্যান্ড অধিগ্রহণ করে তারা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গাড়ি কোম্পানিতে পরিণত হয় তারা। বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনেও জোর দিচ্ছে তারা। অর্থাৎ গাড়ির জগতে উদ্ভাবনেও পিছিয়ে নেই ফক্সভাগেন।

টাটা কনসালেটন্সি সার্ভিস, কর্মী: ৬ লাখ ৭ হাজার ৯৭৯, দেশ; ভারত

ভারতের বিখ্যাত টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান এই টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানিকে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সেবা দিত তারা। এরপর সফটওয়্যার তৈরি ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শক সেবা দেওয়া শুরু করে এই কোম্পানি। ভারতে যে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব হয়েছে, তার নেতৃত্ব দিয়েছে এই টাটা কনসালটেন্সি। ১৯৮০ সালে ভারতের প্রথম সফটওয়্যার গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে ওঠে এই কোম্পানিতে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে এই কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম প্রধান কোম্পানি এখন।

ডিএইচএল গ্রুপ, কর্মী: ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৯, দেশ: জার্মানি

আজকের পৃথিবীতে কুরিয়ার ও লজিস্টিক সেবায় শীর্ষস্থানীয় নাম ডিএইচএল গ্রুপ। এই গোষ্ঠীর আরেক নাম ডয়েচে পোস্ট এজি। পণ্য পরিবহনে ডিএইচএলের সেবা বিশ্বজুড়ে ভরসার নাম। বিশ্বের ২২০টি দেশে কাজ করছে এই কোম্পানি। এত বড় সরবরাহব্যবস্থা সামলাতে স্বাভাবিকভাবেই বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। তাদের লক্ষ্য, ২০৫০ সালের মধ্যে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা।

কম্পাস গ্রুপ, কর্মী: ৫ লাখ ৮০ হাজার, দেশ: যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যভিত্তিক কম্পাস গ্রুপ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য সরবরাহ ও সহায়তা সেবা দেওয়া কোম্পানি। তাদের কাজের ক্ষেত্রে বেশ বড়—স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে, শিক্ষা, ব্যবসা-শিল্প, ক্রীড়া ও বিনোদনের মতো খাতে তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার কাজও তারা করে থাকে। এত বিস্তৃত পরিসরে সেবা দিতে তাদের বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। তাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিও ভালো। ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কৌশলী। প্রতিবছরই তারা ভালো মুনাফা করছে। এ ক্ষেত্রে তারা টেকসই।