বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ গাড়ি কোনগুলো

বিলাসবহুল গাড়ি কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়—এগুলো সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা ও নৈপুণ্যেরও প্রতীক। এখন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়িগুলো আধুনিক অটোমোবাইল প্রকৌশলের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যেমন নতুন প্রযুক্তি, নিখুঁত কারুশিল্পের সমন্বয় ঘটেছে এসব গাড়িতে।

কিন্তু এসব গাড়ি কেন এত ব্যয়বহুল। এর রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের অনন্য নকশা, সীমিত উৎপাদন ও আধুনিক উপকরণে। এসব কারণে এই গাড়িগুলোর প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ। এসব গাড়ি তৈরি হয় ধনকুবের অভিজাতদের জন্য। তাঁরা এসব গাড়ি কেবল মর্যাদার প্রতীক নয়, বিনিয়োগ হিসেবেও দেখেন। সূত্র মিডল ইস্ট ইকোনমি।

এই বিপুল দামের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সীমিত উৎপাদন ও অতুলনীয় কারিগরি। গাড়ির অভ্যন্তরে অতুলনীয় কারুকাজ, মূল্যবান ধাতুর ব্যবহার ও বিশেষায়িত নকশায় তৈরি এসব গাড়ি ধনীদের মর্যাদার প্রতীক। রোলস–রয়েস ও বুগাতির মতো ব্র্যান্ড বিলাস ও নৈপুণ্যের অনন্য মিশেল।

দেখে নেওেয়া যাক, ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ি কোনগুলো।  

রোলস-রয়েস লা রোজ নোয়র ড্রপটেইল: দাম তিন কোটি ডলার

রোলস-রয়েস লা রোজ নোয়র ড্রপটেইল

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ি রোলস-রয়েস লা রোজ নোয়র ড্রপটেইল। শিল্পী, কারিগর ও গ্রাহকদের সহায়তায় এই মডেলের মাত্র চারটি গাড়ি তৈরি হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে (১ ডলারের দাম ১২২ টাকা ধরে)  এর দাম ৩৬৬ কোটি টাকা। রোডস্টার ধরনের এই গাড়ির আসন দুটি। ফলে চার আসনের প্রচলিত গাড়ির চেয়ে এটি ভিন্ন। এই গাড়ির ছাদ খোলা যায়। এই গাড়ি নির্মাণে যে কারিগর কাজ করেছেন, তিনি দিনে এক ঘণ্টার পালায় কাজ করেছেন। বাঁকানো প্যানেলের ডিজাইন করতে প্রায় দুই বছর গবেষণা করা হয়। আর তা বাস্তবায়ন করতে ৯ মাস কারুশিল্পীরা কাজ করেন।

রোলস-রয়েস বোট টেইল: দাম ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার

রোলস-রয়েস বোট টেইল

বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ি রোলস-রয়েস বোট টেইল। রোলস-রয়েসের সিইও টরস্টেন মুলার-ওটভোস এই গাড়িকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ‘উচ্চাভিলাষী প্রকল্প’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। নান্দনিক ডিজাইনের এই গাড়ি জে-ক্লাস ইয়ট এবং ১৯৩২ সালের বোট টেইলের ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর একটি বোতাম চাপলেই ডেক প্রজাপতির আকার ধারণ করে। গাড়িতে দুটি রেফ্রিজারেটর আছে। এই দুটি রেফ্রিজারেটর ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামত্রায় পানীয় দ্রুত ঠান্ডা করতে সক্ষম। তিন বছরের পরিশ্রমে এই গাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

বুগাতি লা ভোইচুর নোয়ার: দাম ১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার

বুগাতি লা ভোইচুর নোয়ার

বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক ব্যয়বহুল গাড়ি হলো বুগাট্টি লা ভোইচুর নোয়ার। এই গাড়ি দ্রুততা, বিলাসিতা ও অটোমোবাইল খাতে নৈপুণ্যের অনন্য সমন্বয়। গাড়ির ডিজাইনার আখিম আনশেইড দুই দশক আগে এই মডেলের ধারণা পেয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে অনেক বছর পর। নতুন এই গাড়ির মূল বিষয় হলো ১৬ সিলিন্ডারের ইঞ্জিন, যা অটোমোবাইলের জগতে এটি অনন্য। আট লিটার ধারণ ক্ষমতার এই ১৬ সিলিন্ডার ইঞ্জিন ১ হাজার ১০৩ কিলোওয়াট বা ১ হাজার ৫০০ পিএস শক্তি এবং ১ হাজার ৬০০ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপাদন করে।  

পাগানি জন্ডা এইচপি বারচেটা: দাম ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার

পাগানি জন্ডা এইচপি বারচেটা

বিশ্বের চতুর্থ ব্যয়বহুল গাড়ি হলো পাগানি জন্ডা এইচপি বারচেটা। ১৯৫০-এর দশকের বিখ্যাত বারচেটা রেসিং কার থেকে অনুপ্রাণিত হযে এই মডেল তৈরি হয়। এই গাড়িতে ছাদ নেই। এটি চালকের জন্য ভিন্ন ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ওপেন-টপ এই সুপারকারের ওজন মাত্র ১ হাজার ২৫০ কেজি। এই স্বল্প ওজনের কারণে গাড়িটি দ্রুতগামী।

রোলস-রয়েস সুইপটেল: দাম ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার

রোলস-রয়েস সুইপটেল

বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যয়বহুল গাড়ি হলো রোলস-রয়েস সুইপটেল। এর মধ্য দিয়ে রোলস-রয়েস কোচবিল্ড ধাঁচের গাড়ির সূচনা হয়। এই গাড়ি উচ্চাভিলাষী গ্রাহকদের কাছে প্রিয়। ২০ শতকের গাড়ি ও ক্ল্যাসিক এবং আধুনিক প্রমোদতরির আদলে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই গাড়ির মূল বডি চমৎকারভাবে উভয় প্রান্তে সরু হয়ে গেছে—সামনে থেকে পেছনে। গাড়ির পেছনের অংশও চমৎকারভাবে বাঁকানো, যে কারণে গাড়িটি অনন্যতা অর্জন করেছে।

বুগাতি সেন্টোডিয়েচি: দাম ৯০ লাখ ডলার

বুগাতি সেন্টোডিয়েচি

বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যয়বহুল গাড়ি বুগাতি সেন্টোডিয়েচি। এটি সীমিত সংস্করণের হাইপারকার। ব্র্যান্ডটির ১১০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করতে এই মডেলের গাড়ি উৎপাদন করা হয়েছে। এই মডেলের গাড়ি মাত্র ১০টি বানানো হয়েছে। সীমিত সংস্করণ, শক্তিশালী ইঞ্জিন ও অনন্য নকশার কারণে এই গাড়ি ধনী ও সংগ্রাহকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। এই গাড়ির অন্যতম মালিক হচ্ছেন ফুটবলের মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

মার্সেডিজ-মায়বাখ এক্সেলেরো: দাম ৮০ লাখ ডলার

মার্সেডিজ-মায়বাখ এক্সেলেরো

বিশ্বের সপ্তম ব্যয়বহুল গাড়ি হলো মার্সেডিজ-মায়বাখ এক্সেলেরো।  ২০০৫ সালে বাজারে এলেও ১৯ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়ির শীর্ষ ১০–এর তালিকায় আছে এটি। এক্সেলেরোর নকশায় মায়বাখ এসডব্লিউ ৩৮-এর ঐতিহ্যবাহী শৈলী এবং মায়বাখ ৫৭ মডেলের গাড়ির চ্যাসিস বানানো হয়েছে। টায়ার প্রস্তুতকারী ফুয়েল্ডা গাড়িটি তৈরি করেছিল টায়ারের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করতে—এর গতি ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এই গতি অর্জনের জন্য গাড়িতে রয়েছে টুইন-টুর্বো ভি১২ ইঞ্জিন। এই গাড়ির একজন মালিক হচ্ছেন বিশ্বখ্যাত র‌্যাপার জে–জে।

পাগানি হুয়াইরা কডালুঙ্গা: দাম ৭০ লাখ ডলার

পাগানি হুয়াইরা কডালুঙ্গা

২০১৮ সালে পাগানি তৈরি করে হুয়াইরা কডালুঙ্গা। এর পেছনের দিকটা লম্বা লেজের মতো। দুজন সংগ্রাহকের জন্য গোপনে মাত্র এই মডেলের পাঁচটি গাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে এর টাইটেনিয়াম এক্সহস্ট সিস্টেম একেবারেই হালকা।

পাগানি হুয়াইরা ইমোলা রোডস্টার: দাম ৬০ লাখ ডলার

পাগানি হুয়াইরা ইমোলা রোডস্টার

২০২৩ সালে উন্মোচিত পাগানি হুয়াইরা ইমোলা রোডস্টার সীমিত সংস্করণের গাড়ি। এই গাড়িতে আছে মার্সিডিজ-বেঞ্জ এএমজি নির্মিত ছয় লিটারের ভি–১২ ইঞ্জিন; এই ইঞ্জিন ৮৫০ অশ্বশক্তি ও ১ হাজার ১০০ নিউটন-মিটার টর্ক।

বুগাতি ডিভো: দাম ৫৮ লাখ ডলার

বুগাতি ডিভো

বুগাতি ডিভো সীমিত সংস্করণের (৪০ ইউনিট) হাইপারস্পোর্টস কার। ফরাসি রেসিং কার আলবার্ট ডিভোর প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ট্র্যাক পারফরম্যান্সের জন্য বিশেষভাবে এর নকশা করা হয়েছে। এই গাড়ি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলতে পারে। সীমিত উৎপাদন ও চাহিদার কারণে এখন এর দাম মূল দামের দ্বিগুণ।