হোম অফিসের কারণে তরুণ কর্মীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বাড়ছে। এ প্রজন্মের প্রায় ৩৮ শতাংশ কর্মী তাঁদের কাজের পরিবেশের কারণে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন।
হোম অফিসের কারণে তরুণ কর্মীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বাড়ছে। এ প্রজন্মের প্রায় ৩৮ শতাংশ কর্মী তাঁদের কাজের পরিবেশের কারণে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন।

হোম অফিসে ক্লান্ত জেন-জি, ফিরতে চায় অফিসে

ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ অনেকেই পছন্দ করেন বলে একটা সময় মনে করা হয়েছিল। কারণ, যাতায়াতের ঝামেলা নেই, সময়ও বেঁচে যায়। নিজের মতো করে কাজের স্বাধীনতাও থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র আর নেই। জেনারেশন জেড ( যাঁরা জেন-জি নামে বেশি পরিচিত) গ্রুপের কর্মীরা এখন স্বেচ্ছায় অফিস ফিরতে চাইছেন; মানে আবার সবার সঙ্গে পাশাপাশি টেবিলে বসার জন্য চার দেয়ালে ফিরতে চাইছেন।

এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, জেন–জিরা আর একা একা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। কারণ, একাকিত্ব পেয়ে বসার আশঙ্কা, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা ও পেশাগত উন্নতির অভাব।

সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, অফিস পরিবেশের দিকে ঝোঁক বাড়ছে জেন–জি কর্মীদের। তাঁরা এমন কর্মপরিবেশ চাইছেন, যেখানে সামাজিক মেলামেশা ও পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগ বেশি, যা দূরবর্তী বা রিমোট কাজে পাওয়া যায় না। আট হাজার কর্মীর ওপর করা বুপার একটি জরিপে দেখা গেছে, জেন–জি প্রজন্মের কর্মীদের ৪৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এমন চাকরিতে পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন, যেখানে ব্যক্তিগত সহযোগিতা বা সামাজিক যোগাযোগের সম্ভাবনা বেশি।

জরিপটি দেখায় যে তরুণ কর্মীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বাড়ছে। এ প্রজন্মের প্রায় ৩৮ শতাংশ কর্মী তাঁদের কাজের পরিবেশের কারণে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন। তাঁরা সহকর্মী, সিনিয়র বা ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে মিটিং করা হলেও তাতে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার উষ্ণতা থাকে না।

নতুন কর্মীদের জন্য সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা অপরিহার্য। হোম অফিস বা বাড়িতে কাজ করার সময় জেন-জি কর্মীরা সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন না। একজন নতুন কর্মী যখন কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন অনলাইনে সেটি সমাধানের চেষ্টা করা আর সরাসরি সিনিয়রের কাছে গিয়ে শেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। কর্মজীবনের শুরুতে এ ধরনের হাতে-কলমে শেখার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু রিমোট কাজের কারণে এ সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে তাঁদের পেশাগত উন্নতিতে বাধা হচ্ছে। অনেক জেন–জি মনে করছেন, অফিসের বাইরে থাকলে তাঁরা ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছেন।

অনেকে তরুণ কর্মীর জন্য অফিস শুধু কাজের স্থান নয়, এটি সামাজিক ও পেশাগত সংযোগ এবং সামাজিকতার কেন্দ্রও বটে। এ ব্যাপারে এক জেন-জি কর্মীর ভাষ্য, ‘আমি বিশেষভাবে এমন পদে আবেদন করেছি, যেখানে শারীরিকভাবে অফিসের সুযোগ রয়েছে, সহকর্মীরা আছেন, মধ্যাহ্নভোজের সময় মেলামেশা করতে পারি এবং সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারি।’ অফিসে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব, পরামর্শমূলক সম্পর্ক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে, যা দূরবর্তী কাজে সহজে পাওয়া যায় না।

তবে বেশির ভাগ জেন–জি কর্মী পূর্ণকালীন অফিস চান না। জরিপ অনুযায়ী, মাত্র এক-দশমাংশ তরুণ কর্মী অফিসে সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করতে চান। অর্থাৎ, তাঁরা হাইব্রিড ব্যবস্থা বেশি পছন্দ করছেন।

অফিস আবারও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে, তবে কর্মক্ষেত্রে রুচি ও রীতিও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তরুণেরা দ্রুত মানিয়ে নেবেন এবং অফিসের সামাজিক ও ক্যারিয়ারের সুবিধা গ্রহণ করবেন।

জেন-জি কর্মীদের অফিসে ফিরে আসার এই প্রবণতা শুধু কর্মক্ষেত্রের জন্য নয়; বরং সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অফিস শুধু কাজ করার জায়গা নয়, এটি একটি সামাজিক কেন্দ্র। অফিসে মানুষে–মানুষে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, একে অপরের কাছ থেকে শেখে ও নিজেদের একাকিত্ব দূর করে।