গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি
কী খবর বন্ধুরা! শিরোনাম দেখেই তোমরা হয়তো বুঝে গেছ, মানুষটা কে? হ্যাঁ, আজ আমরা কথা বলব শ্রীনিবাস রামানুজনের ব্যাপারে। তো চলো, দেরি না করে জানা যাক এই মহান ভারতীয় গণিতবিদের জীবন সম্পর্কে।
২২ ডিসেম্বর, ১৮৮৭। সবে ডুবেছে সূর্য। আকাশ তখনো ডুবসূর্য রঙে রাঙা। ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের তাঞ্জোর জেলার ইরভেদ শহরের শ্রীনিবাস আর কোমলতাম্মাল দেবীর ঘরে এল এক ফুটফুটে সন্তান। তাঁর নাম রাখা হলো রামানুজন। দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল রামানুজন। তাঁর বয়স যখন ১২, তখন সে পড়ছে কুম্ভকোনাম শহরের টাউন হাইস্কুলে।
তো একদিন গণিতশিক্ষক এসে পড়াচ্ছেন, যদি কোনো সংখ্যাকে সেই সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা হয়, তাহলে ভাগফল সর্বদাই হবে ১। কিন্তু কিশোর রামানুজনের মনে একটা খটকা লাগল। সে স্যারকে প্রশ্ন করল, ‘স্যার আমরা যদি ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করি, তাহলেও কি ভাগফল ১ আসবে?’ কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর স্যারের কাছে ছিল না। তাই তিনি রামানুজনকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলেন। কিন্তু স্যার তো বুঝলেন না যে এই ধমক দেওয়া প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে গণিতের এক বড় রহস্য। প্রতিটি সংখ্যার মধ্যে রামানুজন আবিষ্কার করে অপার রহস্য, সংখ্যাতত্ত্বের চর্চায় সে সারাক্ষণ তন্ময়। রামানুজনের পরিবার এতটাই গরিব ছিল যে তাকে স্কুলে পড়ানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই সে প্রথম হয়ে আসছে প্রতিটি পরীক্ষায়। তাই সে বৃত্তি পায় আর সেই টাকা থেকেই সে স্কুলের বেতন দেয়। পিতা শ্রীনিবাস কাপড়ের দোকানের হিসাবরক্ষক এবং তাঁর মাতা কোমলতাম্মাল ছিলেন গৃহিণী।
মাসে ৩২ টাকা বৃত্তি পায় রামানুজন, যা তাঁর বাবা শ্রীনিবাসের মাসিক আয়ের চেয়ে ১২ টাকা বেশি। ১২ বছর বয়সেই রামানুজন হাতে পেল ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত এস এল লোনির (S L Loney) ‘ট্রিগনোমেট্রি’ বইটি। এভাবেই কাটতে লাগল রামানুজনের বাল্যকাল। ১৬ বছর বয়সে রামানুজন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জুনিয়র সুভ্রামানিয়াম বৃত্তি লাভ করে কুম্ভকোনাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু গণিতের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার ফলে পরের পরীক্ষায় ইংরেজিতে অকৃতকার্য হন এবং তাঁর বৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কুম্ভকোনাম ত্যাগ করে প্রথমে বিশাখাপত্তনমে এবং পরে মাদ্রাজে যান। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ফার্স্ট এক্সামিনেশন ইন আর্টস (FA বা IA) পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং অকৃতকার্য হন। তিনি আর ওই পরীক্ষা দেননি। চালাতে থাকেন।
১৭ বছর বয়সে রামানুজন হাতে পেল জর্জ শুব্রিজ কারের ‘আ সিন্যাপসিস অব এলিমেন্টারি রেজাল্টস ইন পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স’ বইটি। এর ফলে তাঁর ভাবনায় নব আত্মীয় সূত্রে যুক্ত হলো সমীকরণ, ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস বা অন্তরকলন, বৈশ্লেষিক জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত। এরপর কয়েক বছর তিনি নিজের মতো গণিতবিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যান। এরপর ১৯০৯ সালে রামানুজন বিয়ে করেন। প্রয়োজনের তাগিদেই তিনি স্বভাবের বিপরীতে জীবিকা অন্বেষণের চেষ্টা
এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন একটি পরিচয়পত্র দিয়ে চাকরির সুপারিশ করে তাকে মাদ্রাজ শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে নিলোর শহরের কালেক্টর দেওয়ান বাহাদুর রামচন্দ্র রাওয়ের কাছে প্রেরণ করেন। রামচন্দ্র রাও গণিতের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। রামানুজনের দুটি নোটবুকে তাঁর সব গাণিতিক সূত্রের প্রতিপাদন ও এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ ছিল। রামচন্দ্র রাও কিছুদিনের জন্য রামানুজনের সব ব্যয়ভার বহন করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রামানুজনের জন্য কোনো বৃত্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় এবং দীর্ঘকাল অপরের গলগ্রহ হয়ে থাকতে সম্মত না হওয়ায় তিনি মাদ্রাজ পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে একটি সামান্য পদের চাকরিতে যোগদান করেন।