প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৭

প্রাথমিক বিজ্ঞান

বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যায়-৩-এর বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো। তোমরা মনোযোগসহকারে পাঠ আলোচনাটি পড়বে।

অধ্যায়-৩
প্রশ্ন: বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের অংশ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: একটি কাচের গ্লাসে এক টুকরা বরফ নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দেখা যাবে যে গ্লাসের বাইরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। হাত দিয়ে গ্লাসটি ধরে নিশ্চিত হই, এই পানি গ্লাসের ভেতরের বরফ থেকে আসেনি। কারণ, গ্লাসের ভেতর থেকে কাচ ভেদ করে পানি বাইরে আসতে পারে না। বরফের ঠান্ডায় গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে, আর সেই ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গ্লাসের গায়ে জমেছে।
এভাবেই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি প্রমাণ করা যায় এবং এ জন্য গ্লাসের বাইরের অংশ ভিজে যায়।

প্রশ্ন: চিত্রসহ পানিচক্র ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সূর্যতাপ ভূপৃষ্ঠের অর্থাত্ পুকুর, খাল-বিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে ঠান্ডা হয়ে ক্ষুদ্র পানিকণায় পরিণত হয়। ক্ষুদ্র পানিকণা একত্র হয়ে আকাশে মেঘরূপে ঘুরে বেড়ায়। মেঘের পানিকণাগুলো একত্র হয়ে আকারে বড় হয়ে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে। আবার বায়ুপ্রবাহের কারণে জলীয় বাষ্প মেঘরূপে উড়ে গিয়ে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছায়। সেখানে মেঘের পানিকণা ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয়। এই বরফ গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে গলে পানি হয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট পাহাড়ি নদীর উত্পত্তি হয়। এই নদীর পানি সবশেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এভাবে পানির চক্রাকারে ঘুরে আসাকে পানিচক্র বলে।

প্রশ্ন: জীবের কেন পানি প্রয়োজন?
উত্তর: পানি ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। যেসব কারণে জীবের জন্য পানি প্রয়োজন, তা হলো:
১. পানি খাদ্য পরিপাক করে।
২. পানি জীবদেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে।
৩. সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরিতে উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন।
৪. পানি দেহে পুষ্টি উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে।
৫. পানি দেহের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: বাতাসে যে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?
উত্তর: একটি কাচের গ্লাসে কয়েক টুকরা বরফ নিই। কিছুক্ষণ রেখে দিই এবং গ্লাসের বাইরের দিক পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যাবে যে গ্লাসের বাইরে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমা হয়েছে। বরফের ঠান্ডার কারণে গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে। আর সেই ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানিকণায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে বায়ুতে সব সময় কিছু পানি জলীয় বাষ্প আকারে থাকে।

প্রশ্ন: পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?
উত্তর: পুকুরের পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার উপায়গুলো হলো:
ছাঁকন: পুকুরের পানিতে মিশে থাকা কাদা ও ময়লা পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দ্বারা ছেঁকে পরিষ্কার করা যায়।
থিতানো: পুকুরের পানি কলসি বা অন্য কোনো পাত্রে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় তলানি জমে। অতঃপর পাত্রটিকে কাত করে ওপর থেকে পরিষ্কার পানি সংগ্রহ করা যায়।
ফোটানো: পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে শোধন করা যায়। অন্তত ২০ মিনিট ফোটালে জীবাণু থাকলে মারা যায়।
রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বিশুদ্ধকরণ: পুকুরের পানিতে ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যায়।

প্রশ্ন: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো লেখো।
উত্তর: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো:
১. পুকুর বা নদীর পানিতে বাসনকোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করানো, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা।
২. রোগীর মলমূত্র, বিছানাপত্র ও জামাকাপড় পুকুর, খাল-বিলে ধোয়া।
৩. কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে ফেলা।
৪. কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে খাল-বিল-নদীর পানি দূষিত করে।
৫. বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় গ্রাম ও শহরাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এতে মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে আর্সেনিকদূষণ হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: পানিদূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?
উত্তর: যেসব কারণে পানি দূষিত হয়, সেসব কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকলে পানিদূষণ রোধ করা অনেকটা সহজ হয়।
১. পুকুরের পাড় বা খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করতে হবে।
২. ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হবে।
৩. অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৪. যেকোনো রোগীর ব্যবহূত কাপড়চোপড় পুকুরের পানিতে ধোয়া যাবে না।
৫. পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
৬. কলকারখানার বর্জ্য পরিকল্পিত উপায়ে পরিশোধন করতে হবে।
প্রধান শিক্ষক
ফকিরেরপুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা