অধ্যায়-৪
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের অধ্যায়-৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# পাশের চিত্রটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. অক্ষাংশ কী?
খ. প্রতিপাদ স্থান কী? বুঝিয়ে লেখো।
গ. মূল মধ্যরেখায় যদি সকাল ৮টা হয় তবে ৩৫হ্ন পূর্ব দ্রাঘিমায় সময় কত হবে?
ঘ. ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে নিরক্ষরেখার উভয় দিকে প্রদর্শিত রেখার তাপমাত্রা কি একই হবে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর-ক.
নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে অক্ষাংশ বলে।
উত্তর-খ.
ভূপৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে।
প্রতিপাদ স্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের কোনো বিন্দু থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে একটি কল্পিত রেখা পৃথিবীর ঠিক বিপরীত দিকে বিবেচনা করা হয়। প্রতিপাদ স্থানের ক্ষেত্রে অক্ষাংশ ঠিক বিপরীত অক্ষাংশ হয় অর্থাত্ ৫হ্ন উত্তর অক্ষাংশের প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ৫হ্ন দক্ষিণ অক্ষাংশ। অন্যদিকে দ্রাঘিমাংশের ক্ষেত্রে উভয় স্থানের দ্রাঘিমাংশের সমষ্টি হতে হবে ১৮০হ্ন। যেমন: কোনো স্থানের দ্রাঘিমা ৫০হ্ন পূর্ব হলে ওই স্থানের প্রতিপাদ স্থানের দ্রাঘিমা হবে ১৩০হ্ন পশ্চিম।
উত্তর-গ.
মূল মধ্যরেখার দ্রাঘিমা ০হ্ন এবং প্রদত্ত স্থানের দ্রাঘিমা ৩৫হ্ন
উভয় স্থানের দ্রাঘিমার ব্যবধান ৩৫হ্ন - ০হ্ন = ৩৫হ্ন
আমরা জানি,
১হ্ন দ্রাঘিমার জন্য সময়ের ব্যবধান হয় ৪ মিনিট
৩৫হ্ন দ্রাঘিমার জন্য সময়ের ব্যবধান হয় = (৪×৩৫) = ১৪০ মিনিট।
= ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। [১ ঘণ্টা = ৬০ মি.]
যেহেতু প্রদত্ত স্থানটি মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্বে অবস্থিত, সেহেতু ওই স্থানের সময় হবে অগ্রগামী। অর্থাত্, মূল মধ্যরেখায় যখন সকাল ৮টা, তখন ৩৫হ্ন পূর্ব দ্রাঘিমার সময় হবে
= ৮+২ ঘণ্টা ২০ মিনিট = ১০ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
সুতরাং প্রদত্ত স্থানের সময় তখন সকাল ১০টা ২০ মিনিট হবে।
উত্তর-ঘ.
নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে ২৩হ্ন৩র্০-এ প্রদর্শিত রেখা যথাক্রমে কর্কট ও মকরক্রান্তি রেখা। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখায় ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে একই রকম তাপমাত্রা বিরাজ করবে না। ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখ মূলত সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ দিন অর্থাত্ সূর্য সেদিন নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থান করে। তাই ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ গোলার্ধে তাপ বেশি এবং উত্তর গোলার্ধে তাপ কম বিরাজ করবে।
বার্ষিক গতির কারণে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীর পরিভ্রমণের সময় কতগুলো নির্দিষ্ট তারিখে ও স্থানে সূর্য ও পৃথিবীর অবস্থান ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন ২১ জুন সূর্য উত্তর দিকে কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর সরাসরি কিরণ দেয়। ফলে তখন উত্তর গোলার্ধে বিশেষ করে কর্কটক্রান্তিতে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা দেখা যায়। এ সময় উত্তর গোলার্ধে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। অন্যদিকে ২২ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তিতে অবস্থান করে এবং বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে। আবার ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২১ মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করার ফলে এ সময় উভয় গোলার্ধে দিবারাত্রি সমান থাকে।
চিত্রে প্রদর্শিত নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখা দ্বারা যথাক্রমে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের অবস্থান নির্দেশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর মাসে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে। ফলে ওই সময় দক্ষিণ গোলার্ধ তথা মকরক্রান্তিতে তাপমাত্রা বেশি থাকে। অন্যদিকে, কর্কটক্রান্তি রেখা যেহেতু সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করে, সেহেতু তাপমাত্রা কম থাকে।
তাই মধ্য ডিসেম্বরে নিরক্ষরেখার উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখার তাপমাত্রা ও দক্ষিণে অবস্থিত মকরক্রান্তি রেখার তাপমাত্রা একই হবে না।
মো. আবুল হাছান, শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা