২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্ত্ততি

বাংলা

.

ভাবুক ছেলেটি
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলা বিষয়ের ওপর আলোচনায় আজ রয়েছে বাঙালির গৌরব বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে লেখা ‘ভাবুক ছেলেটি’।
প্রশ্ন: সে ছোটবেলায় কী কী নিয়ে ভাবত?
উত্তর: শান্তশিষ্ট ছেলেটি ছোটবেলায় অনেক কিছু নিয়ে ভাবত। সে ভাবত, রোদবৃষ্টির কথা, মেঘ ডেকে আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে কেন বাজ পড়ে। আরও ভাবত, ঝড়ে গাছপালা ভেঙে গেলে কিংবা ওকে কাটলে ওরা ব্যথা পায় কি না।
প্রশ্ন: সে কবে, কোথা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: সে ১৮৭৪ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
প্রশ্ন: কখন থেকে তিনি ‘বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু’ হয়ে ওঠেন?
উত্তর: বিলেতে এক বছর ডাক্তারি পড়ার পর অধ্যাপকের পরামর্শে ১৮৮১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখান থেকে ট্রাইপস পাস করার পর লন্ডন থেকে বিএসসি পাস করে ১৮৮৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। এ সময় একই পদে একজন ইংরেজ অধ্যাপক যে বেতন পেতেন, ভারতীয়রা পেতেন তার তিন ভাগের দুই ভাগ। তিনি অস্থায়ীভাবে চাকরি করছিলেন বলে তাঁর বেতন আরও এক ভাগ কেটে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে তিনি দীর্ঘ তিন বছর বেতন না নিয়ে কর্তব্য পালন করেন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সরকার তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে সব বকেয়া পরিশোধ করে চাকরিতে স্থায়ী করে। আর তখন থেকেই তিনি ‘বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু’ হয়ে ঠেন।

প্রশ্ন: তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন কোন সত্য প্রমাণ করে?
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু নানা বিষয়ে গবেষণা করেন। তবে তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন ‘গাছেরও প্রাণ আছে’—এই সত্য প্রমাণ করে। তিনি দেখিয়েছেন, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনের মধ্যে অনেক মিল আছে।
প্রশ্ন: তাঁর বক্তৃতার সফলতা সবচেয়ে বেশি ছিল কোন বিষয়ে?
উত্তর: ১৮৯৫ সালে তিনি অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোনো তার ছাড়া তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণে সফলতা অর্জন করেন। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে করা তাঁর এই পরীক্ষণগুলো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমকে দেয়। এসবের ভিত্তিতেই বক্তৃতা দিয়ে তিনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে খ্যাতি অর্জন করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বিদ্যুৎ তরঙ্গ সম্পর্কে তাঁর বক্তৃতা। তাঁর বক্তৃতার সফলতা সবচেয়ে বেশি ছিল ১৮৯৮ সালের ‘বিদ্যুৎ-রশ্মির সমাবর্তন’ বক্তৃতা। এই বক্তৃতার প্রধান বিষয় ছিল ‘বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ’।
প্রশ্ন: ‘তাঁর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞান জগতে এক একটি বিজয় স্তম্ভ’ এমন কথা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছিলেন?
উত্তর: তাঁর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞান জগতে এক একটি ‘বিজয় স্তম্ভ’—এমন কথা বলেছিলেন সুবিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন।
প্রশ্ন: ‘পলাতক তুফান’ নামে লেখাটির আগে কী নাম ছিল? তাঁর কোন বইয়ে এটি ছাপা হয়?
উত্তর: জগদীসচন্দ্র বসু শিশুদের জন্য বাংলা ভাষায় অনেক বই লিখেছেন। ‘পলাতক তুফান’ নামে লেখাটির আগে নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’। এটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। তাঁর অব্যক্ত নামক বইয়ে এটি ছাপা হয়।
প্রশ্ন: অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি কী প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৬ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের দুই বছর পর তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেই বিজ্ঞানমন্দিরে গবেষণা পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন: বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে কোন নামকরা বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: ১৯২৭ সালে লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকায় বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও-নিউটনের সঙ্গে তুলনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাঙালির গর্ব, সফল বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও-নিউটনের সঙ্গে তুলনা করে তিনি যে তাঁদের সমকক্ষ, তার স্বীকৃতিও দেওয়া হয়।
সিনিয়র শিক্ষক
আন-নাফ গ্রিন মডেল স্কুল, ঢাকা